বয়স সতেরো। এখনই বিয়ের পিঁড়িতে নয়, পড়াশোনা করতে চেয়েছিল চণ্ডীতলার এক কিশোরী। পরিবারের দারিদ্র এবং চাপে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছিল বিয়েতে। রবিবার ছিল বিয়ে। কিন্তু তার আগে সেই খবর পৌঁছে যায় প্রশাসনের কাছে। প্রশাসনের উদ্যোগে বিয়ে বন্ধ হওয়ায় নাবালিকা খুশি।
প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পরে পাত্র এবং পাত্রীপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মেয়েটির ১৮ বছর বয়স না হলে বিয়ের কথা তাঁরা ভাববেন না। তখন এই পাত্রের সঙ্গেই বিয়ে হবে। সে জন্য এ দিন হয়ে গেল শুধু আশীর্বাদ। একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই নাবালিকা এ দিন প্রশাসনের কর্তাদের জানায়, তার বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। মূলত পরিবারিক দারিদ্রের কারণে তাই শেষ পর্যন্ত সে আর বিয়েতে আপত্তি করেনি। বিয়ে বন্ধ হওয়ায় আবার মন দিয়ে সে পড়াশোনা করতে পারবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীতলার নৈটি পঞ্চায়েতের চিকরণ্ড ফুলপাড়ার ওই নাবালিকার সঙ্গে সেখানকার পাঁচঘড়ার এক যুবকের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। শনিবার নৈটির পঞ্চায়েত প্রধান সুকান্ত বাগচি সে কথা জানতে পেরে চণ্ডীতলা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সন্টু রিটকে জানান। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে প্রশাসন তত্পর হয়। দুপুরেই পাত্র-পাত্রী এবং দু’জনের পরিবারকে বিডিও অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে হলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং তার আইনি বিধিনিষেধ নিয়ে সকলকে অবহিত করেন বিডিও সিদ্ধার্থ গুঁই, সন্টুবাবু এবং চণ্ডীতলা থানার ওসি তাপস সিংহ।
দারিদ্র এবং লোকজনকে নিমন্ত্রণের প্রসঙ্গ তুলে দুই পরিবার প্রথমে বিয়ে বন্ধে রাজি হয়নি। তখন প্রশাসন বিয়ে বন্ধ না হলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালে মত পাল্টান দুই পরিবারের লোক। বিডিও বলেন, “মেয়েটির বাড়ির লোক লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ১৮ বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। আমরা নজর রাখব। শুধু ওই কিশোরীই নয়, অন্য ক্ষেত্রেও এমন খবর পেলেই প্রশাসন দরকারে হস্তক্ষেপ করবে।’’ সন্টুবাবু আশ্বাস দেন, আঠারো বছর হলেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে ওই কিশোরীর প্রাপ্য ২৫ হাজার টাকা পেতে যাতে সমস্যা না হয়, তা তাঁরা নিশ্চিত করবেন। মেয়ে সাবালিকা হওয়ার পর বিয়ে দেওয়া হলে প্রশাসনিক ভাবে সাহায্য করা হবে বলে আধিকারিকরা আশ্বাস দেন।