দুই জেলার তিনটি পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করল তৃণমূল

প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি দুই জেলার তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনেছিল বিরোধী আসনে থাকা তৃণমূল। সোমবার সেই অনাস্থার উপরে ভোটাভুটিতে তিনটি পঞ্চায়েতই দখল করল তারা। ওই তিনটির মধ্যে রয়েছে হুগলির সিঙ্গুরেরই দু’টি বারুইপাড়া-পলতাগড় এবং বিঘাটি। অন্যটি হাওড়ার সাঁকরাইলের সারেঙ্গা। তিনটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিঙ্গুর ও সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫০
Share:

প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি দুই জেলার তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনেছিল বিরোধী আসনে থাকা তৃণমূল। সোমবার সেই অনাস্থার উপরে ভোটাভুটিতে তিনটি পঞ্চায়েতই দখল করল তারা। ওই তিনটির মধ্যে রয়েছে হুগলির সিঙ্গুরেরই দু’টি বারুইপাড়া-পলতাগড় এবং বিঘাটি। অন্যটি হাওড়ার সাঁকরাইলের সারেঙ্গা। তিনটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

গত বছর নির্বাচনে সিঙ্গুরের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল জেতে ১২টি। চারটি ছিল সিপিএমের দখলে। সম্প্রতি নসিবপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মাধবী রায় তৃণমূলে যোগ দেন। সিপিএম বোর্ড সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। বোর্ড যায় তৃণমূলের দখলে। বারুইপাড়া-পলতাগড়ের ১৮টির মধ্যে গত বছর ভোটে সিপিএম ৮টি এবং বিজেপি পায় ২টি আসন। তৃণমূল পায় ৮টি। বিজেপির সমর্থনে বোর্ড গড়ে সিপিএম। সোমবারের ভোটাভুটিতে তৃণমূ‌লের পক্ষে ১২টি এবং সিপিএমের পক্ষে ৬টি ভোট পড়ে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিঘাটিতে ১১টি আসনের মধ্যে সিপিএমের দখলে ছিল ৬টি, তৃণমূলের হাতে ৪টি এবং নির্দলের হাতে ছিল একটি আসন। এ দিন ভোটাভুটিতে তৃণমূলের পক্ষে ভোট পড়ে সাতটি। বামেরা পায় ৪টি ভোট। এখন সিঙ্গুরে বামেদের হাতে রইল শুধু মির্জাপুর-বাঁকিপুর পঞ্চায়েত। দুই পঞ্চায়েতে হারলেও প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

এই হারের পাশাপাশি এ দিনই দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সিঙ্গুরে স্বস্তিতে নেই সিপিএম নেতৃত্ব। বারুইপাড়া-পলতাগড়ের বিদায়ী বোর্ডের উপপ্রধান সিপিএমের মিঠু মালিক, সদস্য শান্তি বারিক, বড়া পঞ্চায়েতের বাম সদস্য প্রশান্ত ধারা এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুভাষ মান তৃণমূলে যোগ দেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর অভিযোগ, “তৃণমূলের ভয় এবং প্রলোভন, এই দুইয়ের যোগফলেই সিঙ্গুরে এমনটা হয়েছে।”

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিঙ্গুরের নেতা তথা রাজ্যের রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে সিপিএম এবং বিজেপি ছেড়ে সিঙ্গুরের একাধিক পঞ্চায়েতের সদস্য আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাই দু’টি পঞ্চায়েতও আমাদের হাতে এল।”

এ দিন বিজেপি ছেড়েও সিঙ্গুরের কয়েকটি পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। বারুইপাড়া-পলতাগড়ের বিজেপি সদস্য গৌতম সিংহ, সুকুমার খামারু এবং গোপালনগর পঞ্চায়েতেরও দুই সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপি নেতৃত্বও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভয় এবং প্রলোভন দেখিয়ে দলীয় সদস্যদের ভাঙানোর অভিযোগ তুলেছেন।

অন্য দিকে, সাঁকরাইলের পঞ্চায়েতটিতে সিপিএমের সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল কংগ্রেস। ১৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ৬টি, কংগ্রেসের ৫টি, সিপিএমের ৬টি এবং বিজেপির ২টি। গত ১ সেপ্টেম্বর প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, উন্নয়নে ব্যর্থতা-সহ কয়েকটি অভিযোগে অনাস্থা আনে তৃণমূল। সোমবারের ভোটাভুটিতে অনাস্থার পক্ষে তৃণমূলের ৬টি-সহ মোট ১০টি ভোট পড়ে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ ক্ষেত্রেও টাকার বিনিময়ে তৃণমূল দলীয় সদস্যদের নিজেদের পক্ষে ভিড়িয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে বিরোধী দলগুলি। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে বিদায়ী প্রধান কংগ্রেসের রফিক মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের কোনও সাহায্য করেনি। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। এ দিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হয়নি। আমাদের এক সদস্য-সহ কয়েক জনকে কিনে নেওয়া হয়েছিল।”

বিরোধী সদস্যদের টাকা দিয়ে নিজেদের পক্ষে টানার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তপন পাল। তাঁর দাবি, রাজ্যে যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সামিল হতে পারছিল না। তাই অনাস্থা আনা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement