আতঙ্কের এক্সপ্রেসওয়ে/২

ডানকুনি থেকে পালসিট, দাপট ‘গাইডার’দের

কলকাতা শহরের মধ্যে বড় গাড়ির প্রবেশ নিষেধ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা বড় বড় ট্রাক বা ট্রেলারের যাত্রা সেই কারণে ডানকুনিতেই শেষ করতে হয়। পরে সেখান থেকে ছোট লরি বা ট্রাকে ওই সমস্ত পণ্য শহরে আনা হয়। আর এ জন্যই ডানকুনিতে বেআইনি ভাবে ট্রাক-ট্রেলার আনলোডিংয়ের যজ্ঞ চলেছে দিনরাত।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

ডানকুনি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১০
Share:

সিঙ্গুরে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে সার্ভিস রোডের পাশে পুলিশের কিয়স্ক। ছবি: দীপঙ্কর দে।

কলকাতা শহরের মধ্যে বড় গাড়ির প্রবেশ নিষেধ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা বড় বড় ট্রাক বা ট্রেলারের যাত্রা সেই কারণে ডানকুনিতেই শেষ করতে হয়। পরে সেখান থেকে ছোট লরি বা ট্রাকে ওই সমস্ত পণ্য শহরে আনা হয়। আর এ জন্যই ডানকুনিতে বেআইনি ভাবে ট্রাক-ট্রেলার আনলোডিংয়ের যজ্ঞ চলেছে দিনরাত।

Advertisement

ডানকুনিতে ট্রাক-ট্রেলার আনলোডিংয়ের আর একটি কারণ হল, এখান থেকে শহরে ঢোকার দু’টি মুখ রয়েছে। একটি হাওড়ার দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে, অন্যটি নিবেদিতা সেতু হয়ে ডানলপ পেরিয়ে বিটি রোড দিয়ে। তাই চালকদের কাছে ডানকুনিতে গাড়ি খালি করার তাগিদই বেশি। আর এই আনলোডিংয়ের কাজকে ঘিরেই এক্সপ্রেসওয়ের ধারে তৈরি হয়েছে নানা চক্র। যাদের মাধ্যমে অবাধে চলছে এই বেআইনি কাজ। ভিন রাজ্যের কোনও ট্রাক বা ট্রেলার এখানে এলে স্বাভাবিক ভাবেই নানা সমস্যায় পড়েন নতুন ওই চালকেরা। সেই সমস্যা এড়াতে ‘গাইডার’ নামে একশ্রেণির পেশাদার চক্র তৈরি হয়েছে। রোজ অন্তত শ’খানেক চালককে নানাভাবে সহায়তা করে এরা। অবশ্যই নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। ফলে সব সময়েই ‘গাইডাররা’ মুখিয়ে থাকেন বড় বড় ট্রাক-ট্রেলার ডানকুনিতে ঢোকার অপেক্ষায়।

গাড়ি ঢুকলেই কাজে নেমে পড়ে ‘গাইডাররা’। শুরু হয়ে যায় ট্রাক-ট্রেলার থেকে পণ্য নামিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট লরি বা ট্রাকে তোলার কাজ। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মোটর কোম্পানির গাড়ি, টু-হুইলার থেকে বেবি ফুড, চাল, চিনি ছাড়াও অন্যান্য জিনিস। এ ক্ষেত্রে ছোট লরি বা ট্রাক ব্যবহারের কারণ এগুলি শহরে ঢুকতে কোনও বিধিতে আটকাবে না। ফলে পুলিশি ঝামেলাও এড়ানো যাবে। এই সব ছোট লরি, ট্রাককে পথ দেখিয়ে গাইডাররা কলকাতায় গন্তব্যে নিয়ে যায়। এর জন্য টাকাও পায় তারা।

Advertisement

সিঙ্গুরের বড়া থেকে ডানকুনি টোলপ্লাজার আগে পর্যন্ত গাড়ি খালি করার কাজে অবশ্য যথেষ্ট ঝুঁকি ও দায়িত্ব থাকলেও খুব পেশাদারিত্বের সঙ্গেই এই বেআইনি কারবার চলে। কারণ ১৬ চাকার একটি ট্রেলার থেকে অন্য গাড়িতে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য একটি গাড়িকে লেন ভেঙে অন্য লেনে নিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ লেন না ভাঙলে পণ্য লোডিং-আনলোডিং করাই যাবে না। আর এই লেন ভাঙার জেরেই ঘটে দুর্ঘটনা। দুরন্ত গতিতে চলা কোনও গাড়ি হঠাৎই এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে বিশাল ট্রেলার বা বড় ট্রাককে আড়াআড়ি ভাবে লেন ভাঙতে দেখে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। ঘটে প্রাণহানিও। কিন্তু তারপরেও সতর্কতার কোনও বালাই নেই। নেই কোনও পুলিশি তৎপরতা।

“আগে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির পক্ষ থেকে নিয়মভাঙা নানা গাড়ির উপর নজর রাখা হত। ব্যবস্থাও নিত তারা। কিন্তু এখন সে সব আর হয় না। নিয়মভাঙার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।”
সুবীর মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি টোলপ্লাজা কর্মী সংগঠনের সভাপতি

উত্তরপাড়া থেকে দুর্গাপুর নিয়ম করে যাতায়াত করেন সুরজিৎ রায়। তাঁর কথায়, “দুর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না। কিন্তু পথে যেতে যেতে দেখি ডানকুনি থেকে পালসিট যাওয়ার রাস্তায় জায়গায় জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই গাড়িতে মাল ওঠা নামার কাজ হচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি দিনে বা রাতের অন্ধকারে অনেক সময় লক্ষ্য করেন না চালকেরা। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে।’’

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নিত্য যাতায়াত গণেশ দাসের। তিনি বলেন, “আমরা টোল ট্যাক্স দিয়ে যাতায়াত করি। তাই দুর্ঘটনা যাতে এড়াতে পারি তার কিছু দায় কিন্তু থাকে টোল আদায়কারী সংস্থার।”

এক্সপ্রেসওয়েতে এ সব তদারকির জন্য ২০১২ সালে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ডানকুনি, সিঙ্গুর-সহ নানা জায়াগায় ট্রাফিক পুলিশের কিয়ক্স উদ্বোধন করেন। কিন্তু অভিযোগ, তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। ডানকুনির কাছেই ধুলাগড়ে সরকারি এবং মুম্বই রোডের ধারে বেসরকারি ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। সেই টার্মিনাল অল্প সময়ের জন্য ভাড়া নিয়ে গাড়ি খালি করার কাজ অনায়াসেই করা যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।

ডানকুনি টোলপ্লাজা শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির পক্ষ থেকে নিয়মভাঙা নানা গাড়ির উপর নজর রাখা হত। ব্যবস্থাও নিত তারা। কিন্তু এখন সে সব আর হয় না। ফলে মানুষ পয়সা দিয়ে যাতায়াত করেও ন্যূনতম নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। নিয়মভাঙার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।”

(শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement