টেন্ডার বাতিল করাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে বিডিও-কে নিগ্রহের চেষ্টা এবং হুমকির অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার জগত্বল্লভপুরে। বুধবার বিডিও পুলিশের কাছে তৃণমূল শাসিত ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিডিওর অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘জগত্বল্লভপুর ব্লক অফিসের ঘটনা শুনেছি। ওই বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি কাজের টেন্ডার দীর্ঘদিন ধরে খোলা হচ্ছিল না। এর ফলে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল। এ নিয়ে বলতে গেলে বিডিওর সঙ্গে আমার সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়েছে, তার বেশি কিছু নয়।” জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ৪৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং ৪২টি স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। ৯ মার্চ টেন্ডার খোলার দিন ছিল। কিন্তু ৪ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। ফলে ওই দু’টি কাজের জন্য নির্ধারিত তারিখে আর টেন্ডার খোলা হয়নি। নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে টেন্ডার খোলার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে বিডিওকে জানানো হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতিতে টাকা এসে পড়ে আছে। সেই টাকা খরচ করার জন্য জেলা থেকে আমার উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে টেন্ডার খুলে কাজগুলি যাতে দ্রুত শুরু করানো যায় সেই কারণে বার বার বিডিওকে চিঠি দিই। কিন্তু বিডিও টেন্ডার খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হননি।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিও অফিসে দোতলায় নিজের ঘরে ছিলেন বিডিও তাপস মোহান্তি। অন্যদিকে একতলায় নিজের ঘরে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ তিনি জানতে পারেন ওই দু’টি কাজের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিষয়টি জানতে পেরেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দোতলায় উঠে যান সভাপতি। সটান ঢুকে যান বিডিও-র ঘরে। তাঁকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। টেবিলে রাখা ফাইল এবং ডায়েরি বিডিও-র দিকে ছোড়েন বলেও অভিযোগ। বিডিও কোনওমতে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করেন। বিডিও-র ঘরে সেই সময় উপস্থিত কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ সভাপতিকে নিরস্ত করেন। এরপরেই সভাপতি বিডিও-র ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান।
যদিও সভাপতি পরে বলেন, “আমি বিডিওর ঘরে যাইনি। বরং তিনিই আমার ঘরে এসে আমাকে টেন্ডার বাতিলের কথা জানিয়ে দেন। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার সামান্য তর্কাতর্কি হয়।’’ পাশাপাশি বিডিওর বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘‘টেন্ডার যদি বাতিলই করা হবে তা হলে সে কথা আগে জানানো হল না কেন? ফের নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে কাজ শুরু করতে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। ততদিনে বর্ষা নেমে যাবে। ফলে এ বছর আর কাজ করতে পারব?’’
খবর পেয়ে পুলিশ বিডিও অফিসে আসে। পর দিন বিডিও তাঁকে নিগ্রহের চেষ্টা এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে থানায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।” বিডিও-র সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি।” পরে ফের ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। তবে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব কাজের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল পরবর্তী কালে দেখা যায় তাতে বেশ কিছু গরমিল রয়েছে। ফলে টেন্ডার কমিটিই কাজগুলি বাতিল করে দেয়।