ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

চেক ভাঙানোয় গাফিলতি, গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ ব্যাঙ্কের

মালয়েশিয়ার একটি ব্যাঙ্কের চেক ভাঙিয়ে দেয়নি এ দেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এমনকী গ্রাহক বার বার বললেও তাঁকে চেক সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানানো হয়নি। সেটি তাঁকে ফেরতও দেওয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন ওই গ্রাহক। হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৪৩ হাজার টাকা পেলেন ওই গ্রাহক। সোমবার হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে এসে ব্যাঙ্কের চুঁচুড়া শাখার আধিকারিকরা গ্রাহকের হাতে ক্ষতিপূরনের ড্রাফট তুলে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

মালয়েশিয়ার একটি ব্যাঙ্কের চেক ভাঙিয়ে দেয়নি এ দেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এমনকী গ্রাহক বার বার বললেও তাঁকে চেক সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানানো হয়নি। সেটি তাঁকে ফেরতও দেওয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন ওই গ্রাহক। হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৪৩ হাজার টাকা পেলেন ওই গ্রাহক। সোমবার হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে এসে ব্যাঙ্কের চুঁচুড়া শাখার আধিকারিকরা গ্রাহকের হাতে ক্ষতিপূরনের ড্রাফট তুলে দেন।

Advertisement

পেশায় বি টেক ইঞ্জিনিয়ার রাপ্তী মজুমদার চুঁচুড়ার মুখার্জি বাগানের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি সংস্থায় কর্মরত। তাঁর আইনজীবী স্বাগতা চক্রবর্তী জানান, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে সংস্থা থেকে রাপ্তীদেবীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয় ট্রেনিংয়ের জন্য। সেখানে মাস ছ’য়েক কাজ করেন। ২০১১ সালে দেশে ফেরার সময় মালয়েশিয়ার ওই সংস্থা থেকে রাপ্তিদেবীকে বেতন বাবদ ৮৫৯০=২৮ রিঙ্গিত (ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ টাকারও বেশি)-এর সেখানকার একটি ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হয়। ওই বছরের ১ অগস্ট চুঁচুড়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে (ওই ব্যাঙ্কে রাপ্তীদেবীর সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে) ওই চেক জমা দেন। রাপ্তীদেবীর অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা দেননি। বিষয়টি তিনি লিখিত ভাবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরা তাঁর আবেদনে কর্ণপাত করেননি। বাধ্য হয়ে রাপ্তীদেবী হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ জানান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, গ্রাহকের অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে তাঁদের ব্যাঙ্কের লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় ওই চেক ভাঙানো সম্ভব নয়। তাই তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতি হয়নি বলে ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা জানিয়ে দেন,

বিচারকের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েও দেন যে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সরাসরি চেক ভাঙানোর পদ্ধতি নেই। কিন্তু চেকটি কী অবস্থায় রয়েছে সে সম্পর্কে তাঁরা গ্রাহককে জানাতে বাধ্য। যদিও এ ক্ষেত্রে গ্রাহক একাধিক বার চিঠি দিলেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও জবাব দেননি। চেকও ফেরত দেননি। তাই ওই গ্রাহক যথেষ্ট হয়রান ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। সব দিক বিবেচনা করে প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কর্তব্যে অবহেলা করেছেন। আদালত নির্দেশ দেয়, রাপ্তীদেবীকে মামলার খরচ হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে ওই ব্যাঙ্কের চুঁচুড়া শাখার ম্যানেজার-সহ তিন আধিকারিককে। যদি মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চেকের অর্থ লেনেদের বিষয়টি ঠিক হয়ে থাকে তবে ওই চেকের অর্থ রাপ্তীদেবীর অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় চেকটি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের টাকা জমা না দিলে ৯% হারে সুদও দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যান। কিন্তু সেখানেও হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়। গত ২৫ অগস্ট ব্যাঙ্কের তরফে ক্ষতিপূরণ এবং মামলার খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকার একটি ড্রাফট তুলে দেওয়া হয় রাপ্তীদেবীর হাতে। একইসঙ্গে সুদ বাবদ ২৫৫০ টাকার আরও একটি ড্রাফট দেওয়া হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement