হুগলি জেলাপরিষদ

উন্নয়ন ব্যাহত, সভাধিপতির বিরুদ্ধে মমতাকে চিঠি ৩২ তৃণমূল সদস্যের

বহু রাস্তার কাজ শুরু হয়নি। টাকা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ ওঠায় চন্দননগরের একটি বিনোদন পার্কের টিকিটে জেলা পরিষদের হলোগ্রাম লাগানোর কথা ছিল। তা এখনও হয়নি। পঞ্চায়েত এলাকায় চার তলা বাড়ি তৈরির অনুমতি (স্ট্রাকচারাল অ্যাপ্রুভাল) নিতে হয় জেলা পরিষদের কাছ থেকে। এতে মোটা টাকা রাজস্ব আসে জেলা পরিষদের। কিন্তু এ বিষয়ে জেলা পরিষদ এখনও নিজস্ব আইন (বাই ল) কার্যকর করছে না। ফলে, মিলছে না রাজস্বও। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বছর দেড়েক আগে হুগলি জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু এর মধ্যেই দলীয় সভাধিপতির কাজকর্মে অসন্তুষ্ট জেলা পরিষদের ৩২ জন তৃণমূল সদস্য।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩২
Share:

বহু রাস্তার কাজ শুরু হয়নি।

Advertisement

টাকা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ ওঠায় চন্দননগরের একটি বিনোদন পার্কের টিকিটে জেলা পরিষদের হলোগ্রাম লাগানোর কথা ছিল। তা এখনও হয়নি।

পঞ্চায়েত এলাকায় চার তলা বাড়ি তৈরির অনুমতি (স্ট্রাকচারাল অ্যাপ্রুভাল) নিতে হয় জেলা পরিষদের কাছ থেকে। এতে মোটা টাকা রাজস্ব আসে জেলা পরিষদের। কিন্তু এ বিষয়ে জেলা পরিষদ এখনও নিজস্ব আইন (বাই ল) কার্যকর করছে না। ফলে, মিলছে না রাজস্বও।

Advertisement

বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বছর দেড়েক আগে হুগলি জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু এর মধ্যেই দলীয় সভাধিপতির কাজকর্মে অসন্তুষ্ট জেলা পরিষদের ৩২ জন তৃণমূল সদস্য। ‘সুবিচার’ চেয়ে তাঁরা সম্প্রতি দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপ্যধায়, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের মূল অভিযোগ, সভাধিপতি মেহবুব রহমান নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছেন। সাধারণ সদস্যদের প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সভাধিপতি অভিযোগ মানেননি। কিন্তু দু’পক্ষের চাপান-উতোরে উন্নয়নের নানা কাজ যে ব্যাহত হচ্ছে, তা ঠারেঠোরে মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।

জেলা পরিষদের ৫০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ৪৬টি। বাকি ৪টি আসন সিপিএমের হাতে। বোর্ড গঠনের কিছু দিন পর থেকেই সভাধিপতির সঙ্গে বিভিন্ন কারণে দলের বেশ কিছু সদস্যের বিরোধ বাধে। ক্রমে সেই বিরোধ বাড়ে। সভাধিপতির কাজে ‘ক্ষুব্ধ’ তৃণমূল সদস্যদের অভিযোগ, সভাধিপতি শুধু কর্মাধ্যক্ষদের প্রস্তাবকেই গুরুত্ব দেন। সাধারণ সদস্যদের অন্ধকারে রেখে কাজ হয়। জেলা পরিষদে তাঁরা অপমানিত এবং লাঞ্ছিত হচ্ছেন। স্থায়ী সমিতির সব সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। সময় মতো সাধারণ সভাও হয় না। আজ, শুক্রবার সেই সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়।

‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্যদের মনোভাব বুঝেই সভাধিপতি শুক্রবারের সভা বাতিল করেন বলে জেলা পরিষদের অভ্যন্তরে গুঞ্জন। ‘বিক্ষুব্ধ’ সদস্যদের ওই চিঠি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাননি দাবি করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সভাধিপতির ব্যাপারে জেলা নেতৃত্বও আমাকে কিছু জানাননি। না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।” সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “আগামী রবিবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে জেলা পরিষদে বৈঠক হবে। সেখানে সব বিষয়েই আলোচনা হবে।”

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে সভাধিপতি মেহবুব রহমান দাবি করেন, “বিশেষ কারণে শুক্রবারের সভাটি বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর পরবর্তী সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। কারা আমার বিরুদ্ধে কোথায় চিঠি দিয়েছেন জানি না। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়নের কাজ যথা নিয়মেই হচ্ছে।”

মেহেবুব পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমানের ভাই। পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর আগে তিনি বাম রাজনীতি করতেন। তিনি সভাধিপতি হওয়ায় গোড়ায় দলের অন্দরে অনেকেই নাক সিঁটকেছিলেন। বিধায়ক দাদার ক্ষমতাবলেই তাঁর পদপ্রাপ্তি বলে গুঞ্জনও উঠেছিল দলের ভিতরে। কিন্তু দলীয় সদস্যদের একটা বড় অংশ এখন যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন, তা তখনও এত প্রবল ভাবে সামনে আসেনি।

সম্প্রতি হুগলিতে এক দলীয় কর্মিসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের কথা যাতে বাইরে না আসে তার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও সভাধিপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিয়ে জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, “এখানে আমাদের যেন কোনও ভূমিকাই নেই। দল কিছু একটা বিহিত না করলে আমাদের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।” শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লক থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের এক সদস্যের কথায়, ‘‘কোনও প্রয়োজনে সভাধিপতির ঘরে ঢুকলে উনি বিরক্ত হন। উন্নয়ন নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার হলে সভাধিপতির ঘরে যেতে পারি না।’’ আর এক সদস্যের ক্ষোভ, “কাজ না হওয়ায় মানুষের কাছে আমাদেরই তো জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’’

জেলা পরিষদ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দু’পক্ষের চাপান-উতোরে পুরশুড়া ব্লকের (এখান থেকেই মেহবুব নির্বাচিত) সোদপুর সেতু থেকে হাটি গ্রাম পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাটি পাকা করার জন্য মাপজোক হয়ে গেলেও কাজ শুরু হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। একই অবস্থা নির্মীয়মাণ সিঙ্গুর কলেজে যাওয়ার রাস্তার। গোঘাটের সানবাঁধি মোড় থেকে নকুণ্ডা হয়ে কুলিয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা বেহাল। কিন্তু সংস্কারের আবেদন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এই থানা এলাকার অনেক জায়গাতেই নলকূপ বসানোর কাজ বাকি। খানাকুলের ঠাকুরানি চক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাকড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তায় সংস্কার নিয়েও বারবার দাবি উঠেছে গ্রামবাসীদের তরফে। কিন্তু কাজ হয়নি।

এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। জেলা পরিষদের এক সিপিএম সদস্যের টিপ্পনী, “এক বছরের মধ্যেই ওরা নিজেদের মধ্যে যা শুরু করল, কাজ করবে কী ভাবে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement