সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। তার মধ্যেই নাতনির জন্য মিলেছিল সুপাত্রের সন্ধান। কিন্তু বিয়ে হবে কি করে? সামর্থ্য কোথায়? চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল বৃদ্ধা ঠাকুমার।
শেষে ‘ত্রাতা’ হয়ে এগিয়ে এল স্থানীয় বালকবৃন্দ ক্লাব ও কয়েক জন প্রতিবেশী। নিমন্ত্রিতদের খাওয়ানো থেকে শুরু করে খাট-বিছানা, জামাকাপড়, বাসন সব কিছুর আয়োজন হল। বালির আনন্দনগরের ভাঙা বাড়ির মাঠে মণ্ডপ বেঁধে বিয়ে হল লিলুয়ার রত্না হালদারের। ঠাকুমা পাঞ্চালীদেবী বললেন, “ওঁরা না থাকলে আমার নাতনিটার যে কি হত!”
ছোট থেকেই লিলুয়া বড় গেট এলাকায় দাদু-ঠাকুমার কাছে বড় হয়েছেন রত্না। তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ হালদার ও মা মায়াদেবী আনন্দনগরে থাকেন। একটি চপের দোকানে কাজ করেন বিশ্বজিৎবাবু। পাঞ্চালীদেবী বলেন, “পরিচারিকার কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে নাতনির পড়ার খরচ আর কোনও মতে দু’বেলা নুন ভাত জোগাড় করতে হয়।”
কয়েক মাস আগে আচমকা লিলুয়ার বাসিন্দা লেদ কারখানার কর্মী এক পাত্রের সন্ধান পান পাঞ্চালীদেবী। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ছেলেটি ও তাঁর পরিবার ভাল। পাত্রের বাড়িরও রত্নাকে পছন্দ হয়। সামর্থ্য না থাকায় কয়েক মাস সময় চান পাঞ্চালীদেবী।
ডিসেম্বরে ফের পাঞ্চালীদেবীর কাছে পাত্রের পরিবার জানতে চান বিয়ের কথা। তখন অমত করেননি পাঞ্চালীদেবী। পাত্রের পরিবারকে নিজেদের আর্থিক অবস্থা জানান তিনি। তাতে রাজি হন তাঁরাও। পাঞ্চালীদেবী আক্ষেপ করে বলেন, “প্রথম নাতনির বিয়ে একটু অনুষ্ঠান না করলে কি হয়?” ইতিমধ্যেই রত্নার বাবা ও ঠাকুমা আনন্দনগরের ওই ক্লাবের সদস্যদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানান। প্রতিবেশী ও পরিচিতেরাও সাহায্যে করেন।
ক্লাবের সদস্যরা জানান, মণ্ডপ, আলো ছাড়াও তাঁরা স্বেচ্ছায় বাসনপত্র, খাট, বিছানা দিয়েছেন। সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েতের তরফেও পাত্রীর জন্য শাড়ি, পাত্রের শাল দেওয়া হয়েছে। আবার খাওয়াদাওয়ার খরচের বেশ কিছুটা তুলে দিয়েছেন কয়েক জন প্রতিবেশী। স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব মণ্ডল বলেন, “বর আনার গাড়িও আমরাই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাড়ার মেয়ের বিয়ে বলে কথা।”
বরযাত্রী ছিলেন ১০০ জন। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, বাঁধাকপি, আলুরদম, বেগুনি, মাছ, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি। পরিবেশন করলেন পাড়ার ছেলেরাই। ক্লাবের তরফে নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ নিশ্চিন্দা ও লিলুয়া থানার বড়বাবুরা। আর রত্না বললেন, “আমার এত দাদা ছিল, আজ জানলাম।”