আন্দুল রাজবাড়ির একাংশ সংস্কার ও সংরক্ষণ করে পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য। কী ভাবে হবে এ কাজ, তার রূপরেখার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে অর্থও। অবহেলায় প্রায় ১৮৫ বছরের প্রাচীন, অনুপম এই স্থাপত্যের বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে। পর্যটন দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, এই ব্যাপারে কেন্দ্রের সহায়তা পাওয়া যাবে। বিস্তারিত নকশা বা ডিপিআর পাওয়ার পরে কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হবে।
১৮৩০ সালে রাজা রামনারায়ণ রায় বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু করেন। কাজ চলে ১৮৩৪ পর্যন্ত। পেল্লাই এই প্রাসাদের সর্বাঙ্গে এখন জীর্ণতার ছাপ। বাড়ির সামনে কেবল মাঝের অংশে গোটা ১২ স্তম্ভ, একেকটি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু। এটিকে বলে নাচঘর। এই অংশে, ভিতরে এককালে ছিল ২০টি বাহারি স্তম্ভ। উপর থেকে ঝুলত ঝাড়বাতি। নামী বাঈজি, নর্তকীদের মজলিস লেগেই থাকত। এর দু’পাশে তিন তলা ভবনের দু’টি অংশ। প্রতিটি তল ২০ ফুট উঁচু। এখন এই তিন তলেই লোক থাকেন। নাচঘর ভেঙে চৌচির। উপরে খোলা ছাদ দিয়ে সরাসরি নীচে বৃষ্টির জল পড়ে। চারপাশে আগাছায় ভরা। সামনের প্রায় তিন বিঘা আয়তনের খোলা মাঠের অধিকারেও যেন থাবা বসিয়েছে অন্যরা। তা নিয়ে সঙ্গত ক্ষোভ রাজবাড়ির অন্যতম মালিক অরুণাভ মিত্রর। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার-সংরক্ষণের প্রস্তাবে সায় দিয়ে দিয়েছি। প্রশাসনিক অফিসাররা কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন।” এ ছাড়া সংরক্ষণে পারদর্শী আইআইটি-র অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারও এসেছিলেন।
কী ভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা? রাজ্যের পর্যটন অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি পরিস্থিতি দেখে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট দাখিল করেন।” সাঁকরাইলের বিডিও প্রসেনজিত্ ঘোষ বলেন, “জেলাশাসকের মাধ্যমে এক পরিকল্পনা পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে। মধ্যবর্তী অংশ বা নাচ ঘরটির সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে।” তিনি বলেন, ডিপিআর তৈরির জন্য জেলা পরিষদ ছয় লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।
১৯৬২ সালে মীনাকুমারী, গুরু দত্ত এবং ওয়াহিদা রহমান অভিনীত ‘সাহেব বিবি আউর গুলাম’ তৈরির জন্য পর্চালক গুরু দত্তর টিম দীর্ঘদিন শু্যটিং করেছিল আন্দুল রাজবাড়িতে। অরুণাভ মিত্র এ কাথা জানিয়ে বলেন, টলিউড, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপনের ছবি বিস্তর হয়েছে এই রাজবাড়িতে। শুটিং করেছেন স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও।
দু’পাশের ভবন সংস্কার না করে কেবল নাচঘরের ভোল বদল করলে গোটা ভবনটির আকর্ষণ কতটা হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংস্কারের পর নাচঘর দেখভালের দায়িত্ব কাকে, কী ভাবে দেওয়া সম্ভব সেটাও বিবেচনা করা হবে বলে পর্যটনকর্তারা জানান।