খোলা আকাশের নীচে এ ভাবেই শিশুদের জন্য রান্না হয়। বাগনানে কাঞ্চিপাড়ায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।
কোথাও আটচালা, ক্লাব। কোথাও আবার প্রাথমিক স্কুল--এ ভাবেই চলছে হাওড়া জেলার সিংহভাগ অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র। সাতের দশকের মাঝামাঝি থেকে অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র গড়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন শিশুদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আসন্নপ্রসবাদের। তাঁদেরও অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র থেকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু যথেষ্ট তহবিল থাকা সত্ত্বেও অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলির নিজস্ব বাড়ি তৈরি হয়নি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে এই সব কেন্দ্র।
এখনও পর্যন্ত জেলায় অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। তার মধ্যে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে শুধুমাত্র ১২০০ কেন্দ্রের। বাকিগুলি চলে ক্লাব, আটচালা, মাদ্রাসা, প্রাথমিক স্কুল এমনকী হাইস্কুলে। এমনই তথ্য জানা গিয়েছে জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগ সূত্রে।
নিজস্ব ভবন ছাড়া বাকি যে সব জায়গায় অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র চলে সেগুলি এই রকম--প্রাথমিক স্কুলে চলে ৭০৯টি। মাদ্রাসা, আটচালা, ক্লাব, এমনকী গ্রামে বিভিন্ন মানুষের বাড়ির বৈঠকখানা, হাইস্কুল এবং খোলা জায়গায় চলে বাকি কেন্দ্র। নিজস্ব বাড়ি না থাকার ফলে যে সব অসুবিধা হচ্ছে তা হল, বেশিরভাগ কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সরকারি কর্মসূচি পালন যায় না। শৌচাগার ও নলকূপ নেই অনেক কেন্দ্রেই। নিজস্ব বাড়ি থাকলে তবেই একটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ আকার দেওয়া যায়। এর জন্য যা প্রয়োজনীয় অর্থাৎ নলকূপ, পরিবেশের শুদ্ধতা, শৌচাগার সবই করা যায় একমাত্র নিজস্ব ভবন থাকলে। কিন্তু নিজস্ব বাড়ি না থাকায় কেন্দ্রগুলি রান্না করা খাবার বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বাকি কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জেলাওয়াড়ি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হলেও অপুষ্টিতে ভুগছে বহু শিশু। সম্প্রতি তাদের জন্য যৌথভাবে বিশেষ ব্যবস্থা করেছে জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগ ও জেলাপরিষদ। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের বিশেষভাবে তৈরি পৌষ্টিক লাড্ডু বিনা পয়সায় বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে প্রতিদিন একটি করে ডিম দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য শিশুদের দেওয়া হয় প্রতিদিন মাথাপিছু আধখানা করে ডিম। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলির নিজেদের ‘রুগণ্তা’ দূর করে পরিকাঠামোগত উন্নতি করা না হলে শুধু মাত্র পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সমস্যা কতটা মিটবে তা নিয়ে সংশয়ে বিভিন্ন মহল।
খোলা জায়গা বা ক্লাবে যে সব অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র চলে, দেখা গিয়েছে সেখানকার পরিবেশ বেশ অস্বাস্থ্যকর। অথচ সেই পরিবেশেই রান্না করে খাবার শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বাগনানে ক্লাবে চলা এমন একটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের কর্মী এবং সহায়িকা জানালেন, এইভাবেই তাঁরা বছরের পর বছর ধরে খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছেন। নিজস্ব বাড়ি তৈরির জন্য সরকারের কাছে বার বার আবেদন করার পরেও কোনও কাজ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। একই হাল নিজস্ব ঘর না থাকা জেলার অন্যান্য অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রেরও।
সব থেকে শোচনীয় হাল শ্যামপুর ২, পাঁচলা, শ্যামপুর ১ প্রভৃতি ব্লকের। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের সংখ্যার তুলনায় ঘরের সংখ্যা খুব কম। একই হাল হাওড়া শহরেরও। নিজস্ব ঘরের ক্ষেত্রে অবশ্য আমতা-১ ব্লকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল।
জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলির নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য টাকার অভাব নেই। অভাব হল জমির। সাধারণত, গ্রামবাসীরাই এ জন্য জমি দান করেন। জমি না মেলার জন্যই ভবন তৈরির কাজ তেমনভাবে হচ্ছে না। এ বিষয়ে হাওড়া জেলা পরিষদের নারী ও শিশু সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ আম্বিয়া বেগম বলেন, “আমরা জমি খোঁজার জন্য প্রতিটি ব্লককে নির্দেশ দিয়েছি। যেখানেই জমি পাওয়া যাচ্ছে, কেন্দ্রের ঘর তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে।”
টোটোচালকদের বিক্ষোভ। বালি ব্রিজে টোটো চলাচল নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধল চালকদের। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কয়েক দিন আগেই হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে বালি ব্রিজে টোটো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে যাত্রী নিয়ে কয়েকটি টোটো বালি ব্রিজ দিয়ে আসছিল। বালি ঘাটে সেগুলিকে আটক করে পুলিশ। এরই প্রতিবাদে সমস্ত টোটো চালক এক জোট হয়ে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ দেখায়।