Chanditola

গুলিতে মৃত যুবক, কারণ নিয়ে ধন্দ

এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘খুন করে খুনিরা দেহ বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে, এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আরও বিস্ময়কর বিষয় হল, খুনিরা নাকি ওই যুবকের মোটরবাইকও তাঁর বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

দীপঙ্কর দে

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে চণ্ডীতলায়। সোমবার সন্ধ্যায় কানাইডাঙার বাসিন্দা পেশায় সফ্‌টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ভক্তিভূষণ বাগকে (৩৫) তাঁরই ঘরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান স্ত্রী সুনন্দা। ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। সুনন্দা ও তাঁর প্রতিবেশীরা চণ্ডীতলার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান ভক্তিভূষণকে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, খুন করা হয়েছে ভক্তিভূষণকে।

Advertisement

ওই যুবককে কে বা কারা খুন করল, হত্যার কারণ-ই বা কী, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, মৃতের পরিবারের সদস্যদের বয়ানে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, থানায় না-জানিয়ে নার্সিংহোম থেকে দেহ এনে সৎকারের আয়োজন করছিল ভক্তিভূষণের পরিবার। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। কেন ওই পরিবার বা নার্সিংহোম পুলিশকে ঘটনার কথা জানায়নি, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও সুনন্দা এবং মৃতের বাবা মদন বাগের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে ভক্তিভূষণকে। মদনবাবু পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। দেহ ময়না-তদন্তে পাঠান‌ো হয়েছে। পুলিশ জানায়, ভক্তিভূষণের কানের ঠিক উপরে (যাকে সুইসাইড পয়েন্ট বলা হয়) গুলির গভীর ক্ষত রয়েছে।

সোমবার ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতে পুলিশকর্তারা কথা বলছেন ভক্তিভূষণের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তাঁদের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

মদনের দাবি, সোমবার দুপুরে একটি চারচাকা গাড়িতে তিনি ও পরিবারের কয়েক জন বেলুড়মঠে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ভক্তিভূষণ যাচ্ছিলেন তাঁর মোটরবাইকে। মঠে পৌঁছে ছেলেকে ফোন করেন মদনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বিকেল ৪টে নাগাদ ফোন করলে ছেলে বলে, ও একটি কাজে আটকে গিয়েছে। আসতে সময় লাগবে। কিছুক্ষণ পরে ফের ফোন করলে ভক্তিভূষণ জানায়, ও বেলুড়মঠের কাছে চলে এসেছে। তার কিছুক্ষণ পরে বাড়ি থেকে বৌমা ফোন করে জানায়, ছেলেকে মারধর করে কয়েক জন বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে। তার অবস্থা খারাপ। ওকে নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ এরপর মদনবাবু সোজা নার্সিং হোমে চলে যান। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করেন। তারপর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এর পরেই তাঁদের বাড়ি যায় পুলিশ।

কেন পুলিশকে ঘটনার কথা জানাননি?

মদনের দাবি, তিনি থানায় ফোন করেছিলেন। কিন্তু কেউ ধরেননি। তিনি বলেন, ‘‘একটি সাদা রঙের গাড়িতে চার-পাঁচ জন এসেছিল। তাদের মুখ ঢাকা ছিল। ছেলেকে বাড়িতে দিয়ে চলে যায়। তারপর এক জন আমার ছেলের মোটরবাইকটিও বাড়িতে দিয়ে যায়।’’ এই বক্তব্য বিশ্বাস করতে রাজি নন পুলিশকর্তারা। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘খুন করে খুনিরা দেহ বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে, এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আরও বিস্ময়কর বিষয় হল, খুনিরা নাকি ওই যুবকের মোটরবাইকও তাঁর বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে।’’

কী বলছেন সুনন্দা? তিনি বলেন, ‘‘বিকেলে ও নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে ছিল। আমি চা নিয়ে গিয়ে ডেকেছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর না-দেওয়ায় চলে আসি। কিছুক্ষণ পরে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেখি বালিশ রক্তে ভিজে গিয়েছে।’’ কোনও গুলির শব্দ তিনি পাননি বলে জানিয়েছেন সুনন্দা। গাড়ি করে কেউ এসেছিল কিনা, এলে কত জন এসেছিল, তা-ও তিনি দেখেননি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, চাকরি দেওয়ার নামে ভক্তিভূষণ অনেকের থেকে টাকা নিয়েছিলেন। যদিও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, এমন কোনও অভিযোগ তাঁরা আগে শোনেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement