উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র
হাতের কাছে ইএসআই হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসা করাতে যাওয়ার উপায় নেই উলুবেড়িয়া মহকুমার বিভিন্ন কল-কারখানার প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের। কারণ, ২০৬ শয্যার উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল এখন কোভিড হাসপাতাল। বর্তমানে যেখানে মাত্র ছ’জন করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে।
ছ’জন করোনা রোগীর জন্য তাঁরা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে কেন বঞ্চিত হবেন, প্রশ্ন তুলছেন শ্রমিকেরা। যাঁদের অনেককে বাড়তি খরচ করে কলকাতার মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার খরচের ভয়ে সেখানে যাচ্ছেন না। রোগ পুষে রাখছেন। কবে আবার উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল তাঁদের জন্য খুলে দেওয়া হবে, সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
সমস্যার কথা মানছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এখনই কোনও দিশা দেখাতে পারছে না তারা। হাসপাতালের সুপার সুবীরকুমার বর্মণ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে হাসপাতাল করোনা হাসপাতাল হয়েছে। আমরা সেই নির্দেশ মেনেই চলছি।’’ হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ পেলেই ওই হাসপাতালকে নন-কোভিড হাসপাতাল করে দেওয়া হবে।’’ উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সমস্যা হচ্ছে
ঠিকই। বর্তমানে ওখানকার কী অবস্থা, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
ওই হাসপাতাল থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন চিকিৎসা পরিষেবা পান। অতিমারির প্রথম পর্বে হাসপাতালটিকে ‘আইসোলেশন সেন্টার’ করা হয়েছিল। পরে ১০০ শয্যা নিয়ে কোভিড হাসপাতাল করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের চিকিৎসা পরিষেবা। তা এখনও চালু হয়নি।
কিন্তু আনলক-পর্বে সব কলকারখানা খুলে গিয়েছে। পুরোদমে কাজ হচ্ছে। কাজে গিয়ে শ্রমিকদের ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। ঋতু পরিবর্তনে অন্যান্য অসুখ-বিসুখও লেগে রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য সেই কলকাতার মানিকতলা যেতে নাকাল হচ্ছেন অনেকেই। উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে অস্ত্রোপাচার হয়। মহিলাদের প্রসবের ব্যবস্থা আছে। দু’টি ক্ষেত্রেই সকলকে ভুগতে হচ্ছে।
চেঙ্গাইলের জুটমিল শ্রমিক তথা উলুবেড়িয়া বহিরার বাসিন্দা মতিউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘মিলে কাজ করতে গিয়ে ডান হাতে চোট পেয়েছিলাম। উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হল মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা করাতে যেতে অনেক গাড়ি ভাড়া পড়ে গেল। সংসার চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’ ধূলাগড়ির একটি কারখানার শ্রমিক শেখ সাইনুদ্দিন বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের জন্য মাকে ওষুধ খেতে হয়। প্রতি মাসে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতাল থেকে ওষুধ এনে মাকে খাওয়ানো হত। হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হওযার পর থেকে ওষুধ আনতে যেতে হচ্ছে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতাল থেকে। লকডাউনের সময় গাড়ি বন্ধ থাকায় তা-ও আনতে পারিনি। বাজার থেকে বেশি দামে কিনে খাওয়াতে হয়েছে। কাজের ক্ষতি করে সব সময় ওখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’
সমস্যার আশু সমাধানের দাবি তুলছেন সব শ্রমিকই।