মঙ্গলবার গোঘাটে বিধায়কের অফিসের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কাজের মাপ অনুযায়ী ১০০ দিনের প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার কড়া নিয়ম হয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী মজুরি দেওয়ায় মঙ্গলবার কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ এবং পথ অবরোধ করলেন শ্রমিকরা। গোঘাট গ্রামের রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার ঘটনা।
আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শ্রমিকরা মেজো-বাপনা পুকুর থেকে কিছুটা দূরে আরামবাগ-কামারপুকুর রোড টানা একঘণ্টা ধরে অবরোধ করায় বেশ কিছু যানবাহন আটকে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েও অবরোধ তুলতে পারেনি। পরে গোঘাট প্রধান মণীষা সেন গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। তিনি বলেন, “বিষয়টা বিডিওকে জানিয়েছি। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে বসবেন।”
গোঘাট পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের রেজিস্ট্রি অফিস লাগোয়া এলাকার একটি পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে গত ২১ দিন ধরে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৭২ টাকা। কাজটিতে প্রায় ৭,৬০০ শ্রমিক কাজ পাবেন। এখনও পর্যন্ত ২১ দিনের কাজের মধ্যে ১২ দিনের বেতন ঢুকেছে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে। প্রাপ্য সেই মজুরি নিয়েই ক্ষোভ শ্রমিকদের।
শ্রমিকদের পক্ষে অষ্ট পাঁজা, রামপ্রসাদ লোহার, ময়না সিংহর অভিযোগ, ‘‘১০০ দিনের কাজে দৈনিক মজুরি ২০৪ টাকা। ১২ দিনের কাজে মাথা পিছু মজুরি পাবার কথা ২,৪৪৮টাকা করে। কিন্তু পাওয়া গেছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা করে। কাজ করলে পুরো মজুরিই দিতে হবে।” পাশাপাশি শ্রমিকদের আরও অভিযোগ, ভুয়ো শ্রমিকের নামও মাস্টাররোলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন সুপারভাইজাররা।
ওই কাজের অন্যতম সুপারভাইজার তরুণ নন্দী বলেন, “ভুয়ো শ্রমিকের নাম তোলার অভিযোগ মিথ্যা। আর শ্রমিকরা যদি ভেবে থাকেন কাজ যাই হোক, কোদাল ধরলেই পুরো মজুরি পাবেন, সেই দিনও আর নেই। এখন কাজের মাপ অনুযায়ী বেতন দেওয়ার কড়া নিয়ম হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “ওই পুকুরে একজন শ্রমিক ৬২ ঘনফুট মাটি কাটলে তবেই পুরো মজুরি পাবেন। কাজের বোর্ডেও তা দেওয়া আছে। অথচ ৩০ ঘনফুট থেকে ৪০ ঘনফুটের বেশি কেউ মাটি কাটছেন না।”
প্রকল্পের পঞ্চায়েত আধিকারিক তথা নির্মাণ সহায়ক সামসুল আলম বলেন, “পুকুরের মাটি কাটার ক্ষেত্রে পুকুরের গভীরতা এবং কতটা দূরে কাটা মাটি ফেলা হবে সেই মাপজোক করে তবেই স্কিম পাঠানো হয়। তার ভিত্তিতেই একজন শ্রমিক কতটা মাটি কাটলে পুরো মজুরি পাবেন তা নির্ধারণ হয়।’’ এ দিন বিকেলে বিডিও সুরশ্রী পাল শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তিনি বলেন, “প্রকল্পের নিয়মনীতি মেনে কাজের মাপ অনুযায়ী মজুরি মিলবে। শ্রমিকদের তা বোঝানো হচ্ছে।”
ধনেখালির বেলমুড়ির জয়হরিপুর গ্রামে ১০০ দিনের কাজ না পেয়ে এক যুবক টানা অনশন শুরু করেছেন মঙ্গলবার থেকে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জেলা সদর মহকুমার ওই ব্লকে ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছেন না বহু মানুষ। তার প্রতিবাদেই ওই যুবকের এই অনশন। বিষয়টি জানিয়ে ধনেখালি বিডিও অফিসে কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির তরফ থেকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।