ফাইল চিত্র।
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকল। তার ফলে এখানকার পাঁচ হাজার শ্রমিক দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। স্থায়ী রোজগার হারিয়ে অনেকেরই অসহায় অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক পরিবারগুলিকে ২ টাকা কেজি চাল বিলি করতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। এর পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা এবং শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বন্দোবস্তও করা হচ্ছে।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শ্রমিকরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।’’
ওই চটকলের শ্রমকদের অনেকেই জানান, সংসার চালাতে তাঁরা ছোটখাট নানা কাজ করছেন। কিন্তু নিয়মিত কাজ মিলছে না। যা রোজগার হচ্ছে, তাতে দু’বেলা পেটপুরে খাবার জুটছে না। টাকার অভাবে ছোটদের পড়াশোনা প্রশ্নের মুখে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন মিল বন্ধ থাকায় নিয়মের যাঁতাকলে ইএসআই পরিষেবা বন্ধ। তার ফলে ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা মিলছে না। অভিযোগ, মিল বন্ধের পর থেকে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে চল্লিশ জনেরও বেশি মারা গিয়েছেন। বেশ কয়েক জন আত্মঘাতী হয়েছেন।
এই অবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের তরফে বারে বারেই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়, শ্রমিক পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে হবে। নিখরচায় উপযুক্ত চিকিৎসা এবং ছোটদের পড়াশোনার বন্দোবস্ত করতে হবে। চন্দননগরের বেশ কিছু নাগরিক সংগঠন এই নিয়ে পথে নামে। কখনও তাদের তরফে, কখনও হকারদের সংগঠনের তরফে শ্রমিকদের হাতে চাল-ডাল, আলু-সহ নানা জিনিস তুলে দেওয়া হয়। আত্মঘাতী বা চিকিৎসার অভাবে মৃত শ্রমিকের পরিবারের লোকজনের হাতে অর্থসাহায্য তুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ওই শ্রমিক মহল্লায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির করা হয়। নিখরচায় ওষুধও দেওয়া হয়। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা হতাশায় শ্রমিকরা যাকে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে না নেন, সেই জন্য মনোবিদের মাধ্যমে তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
নাগরিক সমাজ এবং শ্রমিকদের তরফে পরিস্থিতির কথা মহকুমাশাসক মৌমিতা সাহা জানানো হয়। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে শ্রমিক পরিবারগুলিকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, তাঁরা যাতে নিখরচায় উপযুক্ত চিকিৎসা পান, সেই ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে স্বনির্ভর হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নাগরিক সমাজের তরফে শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ২ টাকা কেজি দরে চাল পেলে শ্রমিকরা পেটে খেয়ে বাঁচতে পারবেন। বাঁচার লড়াই চালাতে পারবেন। শ্রমিকদের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগের এই মডেল সফল হলে অন্যান্য বন্ধ কারখানার ক্ষেত্রেও তা কার্যকর করা উচিত।’’ বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসবী সংগঠন শ্রমিকদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাবে। প্রশাসন পাশে দাঁড়ালে শ্রমিকরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় ফেরিঘাট হয়ে গোন্দলপাড়া চটকলের অনেক শ্রমিক গঙ্গার অন্য পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন চটকলে কাজের খোঁজে যান। তাঁদের দৈনিক টিকিট কাটতে হয়। মাসিক টিকিটের বন্দোবস্ত করা হলে তাঁদের কিছুটা সাশ্রয় হবে। সেই ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।’’