শ্রীরামপুরে সিল্ক হাবের কাজ থমকে

ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ, বন্ধ জমি মাপা

প্রশাসন সূত্রের অবশ্য দাবি, অল্প কয়েক জন বৈধ চাষি রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিন্তু খাস জমিতে জবরদখলকারীদের দাবি মানার প্রশ্নই নেই। প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কারও কাছে বৈধ সরকারি নথিপত্র থাকলে তা দেখান। কারও জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

প্রতিবাদ: বিক্ষোভ চাষিেদর একাংশের। নিজস্ব চিত্র

প্রশাসনিক দফতরের আধিকারিকরা বলে এসেছেন, জমি নিয়ে সমস্যা নেই। অথচ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে সোমবার শ্রীরামপুরে প্রস্তাবিত সিল্ক হাবের জমি মাপজোকের কাজ বন্ধ করে দিতে হল। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই জমিতে চাষ করছেন। ক্ষতিপূরণ না দিলে জমি নেওয়া যাবে না।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের অবশ্য দাবি, অল্প কয়েক জন বৈধ চাষি রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিন্তু খাস জমিতে জবরদখলকারীদের দাবি মানার প্রশ্নই নেই। প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কারও কাছে বৈধ সরকারি নথিপত্র থাকলে তা দেখান। কারও জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না।’’

শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, রাজ্যধরপুর, পিয়ারাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের অনেক কারখানা রয়েছে। এই সমস্ত কারখানাকে এক ছাতার তলায় এনে শিল্পকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার শ্রীরামপুরের মাহেশ মৌজায় প্রভাসনগরে সিল্ক হাব তৈরির কথা ঘোষণা করে। এক বছরের মধ্যেই প্রকল্প তৈরির কথা বলা হলেও নানা কারণে কাজ শুরু হয়নি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ একর জমিতে ওই প্রকল্প গড়ার জন্য সোমবার জমি মাপজোকের কথা হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শ্রীরামপুরের বিএলএলআরও অস্মিতা দাশগুপ্ত, মহকুমাশাসকের দফতরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা সেখানে যান। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক কাউন্সিলর এবং তাঁদের সঙ্গীরা। মাপ শুরু হতেই আশপাশের বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ শুরু করেন। স্লোগান ওঠে, খুঁটি তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জমিতে ‘শ্রীরামপুর প্রভাসনগর কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’র নামে ব্যানার পুঁতে দেওয়া হয়। কাউন্সিলররা বিক্ষোভকারী মহিলাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত কাজ বন্ধ করে আধিকারিকরা ফিরে যান।

এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে কৃষিজমিতে যারা কারখানা করতে বাধা দিল, তারা কৃষিজমিতে শিল্প করবে!’’ নরেশচন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘জমি নিয়ে মামলা চলছে। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে শিল্প করুক।’’ সবিতা দত্ত এক মহিলা বলেন, ‘‘যে সব পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এখানে চাষ করে, তাদের কথা ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের কিছুই না জানিয়ে হঠাৎ মাপজোক করা হচ্ছে।’’ অনিলকুমার দাস নামে এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘ছয়-সাড়ে ছয় বিঘা জমি আছে। পঞ্চাশ বছর ধরে কাজ করছি। বৈধ কাগজও আছে। আমাদের প্রাপ্য দিয়ে কারখানা করুক।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কারখানা হলে আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা কাজ পাবে?’’

পুরপ্রধান অমিয়বাবু বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের নীতি, জোর করে জমি নেওয়া হবে না। কারও বৈধ কাগজপত্র থাকলে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিবেচনা করা হবে।’’

শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিফ এগ্‌জিকিউটিভ তথা পুর-কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বৈধ নথি থাকলে মহকুমাশাসক বা ভূমি দফতরের কাছে দেখান। তা হলেই সমস্যা থাকবে না।’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাত্র ন’জনের কিছুটা জমি আছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে ওঁদের নোটিস পাঠিয়ে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে।’’ চেষ্টা করেও জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অথবা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) রজত নন্দার বক্তব্য জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement