Coronavirus

কিডনির অসুখে আক্রান্ত রোগিণী করোনা-জয়ী

সুস্মিতাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চোদ্দ বছর আগে প্রথমবার তাঁর একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। দু’বছর পর ফের সেই কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:২৩
Share:

সুস্মিতা সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র

কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল দু’বার। সেরে ওঠার পরে নিয়মিত ডায়ালেসিস চলছিল। তখনই হানা দেয় করোনা। টানা এক মাসের লড়াইয়ে তাকেও হারিয়ে দিয়েছেন ডোমজুড়ের মাকড়দহের শ্রীমানি পাড়ার বছর পঞ্চাশের সুস্মিতা সেনগুপ্ত।

Advertisement

সুস্মিতাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চোদ্দ বছর আগে প্রথমবার তাঁর একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। দু’বছর পর ফের সেই কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে, আরও এক বার কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। হাওড়ার বেসরকারি একটি হাসপাতালে তাঁর ডায়ালেসিস চলত ধারাবাহিক ভাবে।

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে ওই হাসপাতালে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। তখন তাঁকে ভর্তি করানোর জন্য ডোমজুড়ের একটি নার্সিংহোমে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুস্মিতাদেবীর পরিবার। নার্সিংহোম রোগিণীর করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়। গত ১৮ জুন সুস্মিতাদেবীর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। দু’দিন পরে রিপোর্ট এলে দেখা যায়, তিনি করোনা পজ়িটিভ। এর পরেই তাঁর পরিবারের মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে।

Advertisement

সুস্মিতাদেবীর স্বামী সৌমেন্দ্র সেনগুপ্ত জানান, ওই দিনই স্ত্রীকে স্বাস্থ্য দফতর ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরিবারের সদস্যদের গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারের সকলেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কী করে সুস্থ করব স্ত্রীকে, তা ভেবে ঘুম ছুটে যায়।’’

তারপর বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয় সুস্মিতাদেবীর পরিবার। সৌমেন্দ্রবাবু আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পাড়ার বেশ কিছু লোক আমাদের ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করলেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় কয়েকজন প্রতিবেশীকে এড়িয়ে চলতেন পাড়ার অনেকে। গৃহ-নিভৃতবাসে থাকাকালীন খুব সমস্যার মধ্যে দিন কাটাই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য করা হয়নি।’’

টানা এক মাস ফুলেশ্বরের ওই হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে সপ্তাহ খানেক আগে বাড়ি ফিরেছেন সুস্মিতাদেবী। কিডনির সমস্যার জন্য এখন তাঁর ডায়ালেসিস শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই করোনা-আক্রান্তদের তাঁর প্রতিবেশীরা দূরে ঠেলে দিচ্ছে বলে শুনছি। আমার পরিবারেরও সেই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’ কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসছিল তাঁর। কোনওরকমে সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘কোনও করোনা-আক্রান্তকে যেন মানুষ দূরে ঠেলে না দেয়। রোগটা ছোঁয়াচে জানি। কিন্তু রোগী এবং তাঁর পরিবারের মনে সাহস জোগাতে প্রতিবেশীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’’

ফুলেশ্বরের যে হাসপাতালের সুস্মিতাদেবীর চিকিৎসা হয়, তার ডিরেক্টর চিকিৎসক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল ওঁর। নিয়মিত ডায়ালেসিসও চলছে। তাই আমরা ওঁকে আলাদা ভাবে যত্ন নিতে শুরু করি। করোনা নিয়ে কাজ করা বিদেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আধুনিক পদ্ধতিতে রোগিণীর চিকিৎসা শুরু করি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ওঁকে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১

• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement