চুঁচুড়ার জেলাশাসক দফতর সংলগ্ন মাঠের ধারে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। ইনসেটে নিহত ছবি দে। ছবি: তাপস ঘোষ
প্রকাশ্য দিবালোকে চুঁচুড়ায় হুগলির জেলাশাসকের (ডিএম) অফিসের সামনে একটি মাঠের ধারে ছুরির আঘাতে খুন হলেন এক বিবাহিত মহিলা। গলার নলি কেটে তাঁকে খুন করা হয়। শুক্রবার দুপুরের এই ঘটনায় নিহতের নাম ছবি দে (৩৫)। তিনি চুঁচুড়ার সত্যপিরতলায় বাপের বাড়িতে থাকতেন। এই খুনের অভিযোগে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চুঁচুড়া লঞ্চঘাট থেকে ছবির প্রেমিক তারক মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে আদতে ওড়িশার লোক হলেও ছবির সঙ্গে তাঁর বাপেরবাড়িতেই থাকত।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছবির স্বামী দীপঙ্কর দে। তাঁর সঙ্গে ছবির যোগাযোগ ছিল। তিনিই এ দিন সাইকেলে করে স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় খেতে আসেন। অভিযোগ, সেই সময় তারক সেখানে এসে ছবির উপরে হামলা চালায়। বাধা দিতে গেলে ছুরি নিয়ে দীপঙ্করকে তাড়া করে।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত অপরাধের কথা কবুল করে জানিয়েছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পরেও ছবি যে ভাবে স্বামীর সঙ্গেও সম্পর্ক রাখছিল, তা সে মেনে নিতে পারেনি। মাঠের পাশ থেকে খুনে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি এবং তারকের জামা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেই এই খুন। জেরায় ধৃত খুনের কথা কবুল করেছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগে ছবির সঙ্গে চুঁচুড়ার দাসপাড়ার বুড়োশিবতলার বাসিন্দা দীপঙ্করের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে। বছর দেড়েক আগে তারক ওই এলাকায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে আসে। ছবির সঙ্গে তার আলাপ হয়। দু’জনের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ছবির পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। ছবি সংসার ছেড়ে তারকের সঙ্গে ওড়িশায় চলে যান। কিছুদিন পরে অবশ্য ফিরেও আসেন। তবে, শ্বশুরবাড়িতে না গিয়ে তারককে নিয়ে বাপের বাড়িতে ওঠেন ছবি। কিছুদিন পর থেকে দীপঙ্করের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা শুরু করেন ওই মহিলা। মাঝেমধ্যে দীপঙ্কর শ্বশুরবাড়িতে যেতেন। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীকে ফোন করে পরদিন দুপুরে ভাইয়ের চটি কেনার জন্য ঘড়ির মোড়ে আসতে বলেন ছবি।
সেইমতো শুক্রবার সাইকেল নিয়ে ঘড়ির মোড়ে আসেন দীপঙ্কর। চটি কেনার পরে স্ত্রীকে সাইকেলে চাপিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে খাবার কিনতে আসেন
দীপঙ্কর। সেখানেই তাঁরা তারকের মুখোমুখি হন। বচসাও হয়। তারপরেই ওই কাণ্ড। বাইরে গোলমাল শুনে জেলাশাসকের অফিসের কিছু কর্মী বেরিয়ে এলে তারক নিজের রক্তমাখা জামা খুলে পালায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ছবি।
দীপঙ্কর বলেন, ‘‘ছুরিটা তারক কোমরে লুকিয়ে এনেছিল। মনে হয় ও আমাদের পিছু নিয়েছিল। বচসার মধ্যেই ও প্রথমে ছবির পেটে ছুরি চালায়। বাধা দিতে গেলে আমাকে তাড়া করে। ফিরে এসে আবার ছবিকে কোপায়। গলার নলি কেটে দেয়।’’
ছবির ভাই আশিস হালদার থানায় তারকের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘দিদি তারককে নিয়ে বাড়িতে থাকলেও ওর শান্তির কথা ভেবে আমরা আপত্তি করিনি। কিন্তু এই কাণ্ড করবে ভাবিনি। ওর যেন কঠোর শাস্তি হয়।’’