ধৃত: আদালতের পথে রাজু প্রামাণিক ও মহম্মদন আদিন
দিন তিনেক আগে হাওড়ার জয়পুরের সাবগাছতলা এলাকায় গুলিতে জখম হয়েছিলেন গৌর ব্যবর্তা নামে এক যুবক। তদন্তে নেমে শুক্রবার গৌরের স্ত্রী দেবশ্রী-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই প্রেমিকের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বামীকে খুনের জন্য দুই দুষ্কৃতীকে পাঁচ হাজার টাকার ‘সুপারি’ দিয়েছিলেন দেবশ্রী।
শুক্রবার দেবশ্রী ছাড়াও আরও যে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাদের এক জন মহিলার প্রেমিক রাজু প্রামাণিক। অন্য জন মহম্মদ আদিল ওরফে নানকি নামে বাকসাড়া এলাকার এক পরিচিত দুষ্কৃতী। তবে, আর এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি রিভলভারটিও। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই দুষ্কৃতীর কাছেই রিভলভারটি রয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, জেরায় রাজু এবং দেবশ্রী দাবি করেছেন, গৌরকে ভয় দেখানোর জন্য দুই দুষ্কৃতীকে ভাড়া করা হয়েছিল। গুলি চালানোর বিষয়টি তাঁরা জানতেন না।
বাগনানের দেউলটির মেল্লক গ্রামের বাসিন্দা গৌর টিভিতে কেবল সংযোগের কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী দেবশ্রী থাকতেন রাজুর সঙ্গে। গত ২২ মে দেবশ্রী ফোন করে গৌরকে জয়পুরের সিয়াগড়িতে আসতে বলেন। সেই মতো, ওই দিন বিকেলে এক বন্ধুকে নিয়ে মোটরবাইকে সিয়াগড়ি যান গৌর। কিছুক্ষণ পরেই রাজু, নানকি এবং নানকির সঙ্গী মোটরবাইকে সেখানে পৌঁছয়। অভিযোগ, মোটরবাইক থেকে গৌরকে লক্ষ করে দু’টি গুলি করা হয়। একটি লাগে গৌরের উরুতে। অন্যটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গুরুতর আহত গৌরকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর বন্ধু। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। এখনও গৌর হাসপাতালেই আছেন।
জখম যুবকের স্ত্রী দেবশ্রী। নিজস্ব চিত্র
তদন্তকারীরা জানান, বছর আটেক আগে গৌর-দেবশ্রীর বিয়ে হয়। তাঁদের একটি সাত বছরের মেয়ে আছে। দেবশ্রীর বাপেরবাড়ি হিজলক গ্রামে। বিয়ের আগে থেকেই ওই গ্রামেরই আনাজ ব্যবসায়ী রাজু প্রামাণিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও দেবশ্রী সেই সম্পর্ক বজায় রাখেন। দেবশ্রীর শ্বশুরবাড়িতেও যাতায়াত ছিল রাজুর। বছর খানেক আগে স্বামী ও মেয়েকে ফেলে দেবশ্রী তাঁর প্রেমিকের সঙ্গেই ঘর ছাড়েন। বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে তাঁরা থাকতে শুরু করে। গৌর বারকয়েক স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও দেবশ্রী শ্বশুরবাড়ি ফিরতে রাজি হননি।
মাসকয়েক আগে রাজু নিজেই দেবশ্রীকে তাঁর স্বামীর কাছে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু দেবশ্রী রাজি হননি। এর পরেই দু’জনে মিলে গৌরকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। রাজুই দুষ্কৃতী নানকির সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। ধুলাগড়ি সব্জি-বাজার এলাকা থেকে আরও এক দুষ্কৃতীকে সঙ্গে নেয় নানকি।
পুলিশ জানিয়েছে, গুলি করার পরেই নানকি পাঁচ হাজার টাকা বুঝে নেয় রাজুর থেকে। তার পর সঙ্গীকে নিয়ে একটি অটো ‘রিজার্ভ’ করে ডোমজুড়ে চলে যায় সে। রাজু মোটরবাইক নিয়ে আমতা চলে যায়। সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন দেবশ্রী। সেখান থেকে দু’জনে সাঁকরাইলের সারেঙ্গায় যান। মাস কয়েক ধরে সেখানেই ঘরভা়ড়া করে তাঁরা থাকছিলেন। শুক্রবার সকালে সেখান থেকেই দু’জনকে ধরা হয়।