রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: দীপঙ্কর দে
জুটমিল শ্রমিকদের লকডাউন পর্বের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে এ বার পথে নামল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শুক্রবার হুগলির বিভিন্ন জুটমিলের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চলে। রাজ্য সরকার যে নিয়মে লকডাউনের মধ্যে জুটমিল খোলার কথা বলেছে, তার বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা।
হুগলির শহরাঞ্চলে গঙ্গার ধারে ১০টি জুটমিল রয়েছে। রিষড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, বাঁশবেড়িয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই সব জুটমিলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। পরোক্ষ ভাবেও অনেকে এই শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। এমনিতেই চন্দননগরের গোন্দলপাড়া এবং শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ। এখানকার শ্রমিকদের দুর্দশার শেষ নেই। লকডাউনে অন্যান্য জুটমিলের শ্রমিকদেরও সেই অবস্থা হয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার লকডাউনের সময়ের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও জুটমিল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। শ্রমিকদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মার্চ মাসের শেষ দিক থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সরব হয়। শুক্রবার বিভিন্ন জুটমিলের সামনে শ্রমিকেরা বেতনের দাবিতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
সিটু-র বক্তব্য, মাত্র ১৫% শ্রমিক নিয়ে জুটমিলে উৎপাদন কার্যত অসম্ভব। আর এমনটা করা হলে সব শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তাও মিলবে না। তেমন হলে সব শ্রমিককে পূর্ণ সময়ের মজুরি দিতে হবে। জুটমিলের ভিতরে এবং মহল্লায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার দায়িত্ব সরকার এবং মালিকপক্ষকে নিতে হবে। সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা ‘বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়ন’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘যে কোনও সময় গরিব মেহনতি মানুষই কেন বঞ্চনার শিকার হবে? শ্রমিকদের হাঁড়ির হাল জেনেও প্রশাসন বা মালিকপক্ষ তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। শুধু নির্দেশ দেওয়া নয়, সেটা কার্যকর করাও সরকারের দায়িত্ব। অবিলম্বে লকডাউন-পর্বের টাকা মেটানো হোক।’’
একই দাবি সিপিআই প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র। সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শ্রমিকদের পেটে আগে ভাত দেওয়ার বন্দোবস্ত সরকার ও মালিকপক্ষ করুক। করোনা থেকে বাঁচতে শ্রমিক কি অনাহারে মরবে? বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।’’
‘বেঙ্গল জুটমিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বারবারই বলছি, লকডাউনের টাকা অবিলম্বে মেটানো হোক। সুষ্ঠু উৎপাদন কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা দরকার।’’