মনোযোগী: পড়াশোনায় মন অভিভাবকদের। নিজস্ব চিত্র
এঁদের কারওর বয়স ত্রিশ, কেউ আবার চল্লিশের কোঠায়। কেউ চাকরি করেন, কেউ গৃহবধূ। এঁরাই এখন ব্যাগ, বই-খাতা নিয়ে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করছেন। ছুটির পর বাড়িতে গিয়ে সেই পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন সন্তানদের।
লকডাউনের জেরে এই উলট-পুরাণের দৃশ্য দেখা গেল উলুবেড়িয়া তাঁতিবেড়িয়ার একটি বেসরকারি স্কুলে। সরকারি নির্দেশে স্কুল বন্ধ।পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়াশোনা করাচ্ছে বহু স্কুল। উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি স্কুল অনলাইন ব্যবস্থা চালু রাখার পাশাপাশি বাবা-মায়েদের স্কুলে এনে পড়াশোনা করাচ্ছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ছাত্ররা সকলেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে আনলে তারা দূরত্ববিধি মানবে না। তাছাড়া সব পড়ুয়ারা অনলাইন ক্লাসের সুযোগ নিতেও পারছে না। তাই এই বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্কুলের এই আয়োজনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল অভিভাবকদের মধ্যে। স্কুলের ডাকে সপ্তাহে তিনদিন তাঁরা সন্তানের বই-খাতা নিয়ে সঠিক সময়ে পৌঁছে যাচ্ছেন স্কুলে। প্রার্থনা থেকে শরীরচর্চা সবই করছেন তাঁরা। ক্লাসে গিয়ে বোর্ড ওয়ার্কও করছেন।
অরূপ দাস পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষক। তাঁর ছেলে এই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসরুমে বসে ব্ল্যাকবোর্ড থেকে হোমওয়ার্ক টুকছিলেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাস করতে করতে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। এখানে পড়া দেখে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে আবার ছেলেকে পড়াচ্ছি। নতুন ব্যবস্থা ভালই লাগছে।’’ সাধনা মণ্ডল নামে এক অভিভাবিকা বলেন, ‘‘বাচ্চাকে ঘরে রেখে স্কুলে আসতে হচ্ছে ওর পড়াশোনা জানতে। ফলে, একটু সমস্যা তো হচ্ছেই।’’
কিছু অভিভাবকের গলায় শোনা গেল অভিযোগের সুর। কেউ জানালেন, অফিসে অর্ধেক ছুটি নিয়ে এসে ক্লাস করতে হচ্ছে। এক পড়ুয়ার মা আবার জানালেন, স্কুলে পড়া দেখিয়ে দিলেও নানা কাজের চাপে সব মনে থাকছে না। ফলে, সন্তানকে পড়াতে অসুবিধা হচ্ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিল কাঁড়ার বলেন, ‘‘প্রথমে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সব পড়ুয়াকে এর আওতায় আনা যায়নি বলে অনলাইন পড়াশোনার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সমস্ত নিয়ম মেনেই চলছে ক্লাস। প্রত্যেক অভিভাবকক হাত স্যানিটাইজ় করে ক্লাসে ঢুকছেন। মানা হচ্ছে দূরত্ববিধি।’’