মিলের সামনে শ্রমিকদের জটলা। —নিজস্ব চিত্র
পাঁচ দিন বন্ধের পরে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিল শনিবার খুলল বটে, কিন্তু কাজ পুরোদমে হল না। এক সহকর্মীকে ‘গেটবাহার’ করার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ বহাল রাখায় অধিকাংশ শ্রমিক এ দিন কাজে যোগ দিলেন না। শেষে ভোলানাথ কর্মকার নামে ওই শ্রমিকের কাজে যোগ দেওয়ার শর্ত সরল করায় সমস্যা মেটে।
প্রিপেয়ারিং বিভাগের শ্রমিক ভোলানাথ মিলের এআইটিইউসি অনুমোদিত ফেডারেল চটকল মজদুর ইউনিয়নের সহকারী সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে ‘গেটবাহার’ করার প্রতিবাদে সোমবার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। ওই দিনই ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ভোলানাথ-সহ ১০ জন শ্রমিককে ‘গেটবাহার’ করা হয়। মঙ্গলবার মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে মিল খোলার আর্জি জানান শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শনিবার থেকে মিল খোলার কথা ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা জানান, যে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, ভোলানাথ বাদে বাকিদের উপর থেকে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতে ভোলানাথকে শোকজ় করেন মালিকপক্ষ। তাঁকে বাইরে রেখে মিল চালুর সিদ্ধান্ত বহু শ্রমিক মানতে পারেননি। শনিবার সকালে তাঁরা মিলে ঢোকেননি। মিলের সামনে এসে তাঁরা দাবি জানান, সব শ্রমিককে নিয়েই কাজ চালু করতে হবে।
এই অবস্থায় সে ভাবে কাজ হয়নি। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ মিলের সামনে আসে। এআইটিইউসি, সিটু এবং আইএনটিইউসি— এই তিন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রিষড়া পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর সাকির আলি। এআইটিইউসি নেতা প্রাণেশ বিশ্বাসের দাবি, শেষ পর্যন্ত দুপুরে মিল কর্তৃপক্ষ জানান, ভোলানাথ শোকজ়ের জবাব দিলে তাঁর মিলে ঢুকতে বাধা থাকবে না। শ্রমিকরা সে কথা মেনে নেন। এক সময় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় এসে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেন। শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে, এটাই আশা করছি।’’
এই মিলে তৃণমূলের স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠন নেই। ফলে ওই দলের নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। প্রাণেশ বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন, এটা শ্রমিক আন্দোলনের জয়। শাসক দল রাজনৈতিক ক্ষমতা জাহির করতে এসেছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ আমাদের মাইক বেঁধে গেটসভা করতে দেয়নি। সকালে তারা শ্রমিকদের কাজে ঢোকানোরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, লাভ হয়নি।’’ পুলিশ অভিযোগ মানেনি। বিধানসভা ভোটের আগে ‘নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে’ তৃণমূল নেতারা সেখানে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস নেতা সাবির আলি।
এ ব্যাপারে বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘সমস্যা যাতে মেটে, সে জন্যই গিয়েছিলাম শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে। এতে দলাদলির কী আছে!’’ সাকিরের দাবি, শ্রমমন্ত্রী তথা দলীয় নেতা মলয় ঘটকের নির্দেশেই তিনি ওই জুটমিলে শ্রমিকদের সমস্যার খোঁজখবর রাখেন।
এ বারেও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তিনটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও তো কথা বলেছি।’’