অভিযোগ: এই জমি ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
সরকারি নথি বলছে, জমির মালিক জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে সাব-স্টেশন গড়ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এবং তারা দাবি করছে, ওই জমি তারা কিনেছে!
হাওড়ার বালির নিশ্চিন্দা থানা লাগোয়া সাহেববাগান এলাকায়, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ১৭ বিঘা ওই জমিতে সম্প্রতি সাব-স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর তাতেই ফের এ তল্লাটে জমি-মাফিয়াদের অবাধ কারবার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করেছেন স্থানীয়েরা। অনেকেরই অভিযোগ, জমি-মাফিয়াদের আড়কাঠি হিসেবে ব্যবহার করে শাসকদলের একশ্রেণির নেতা এ সব কাজ করছেন। সরকারি একটি সংস্থার জমি ঘুরপথে অন্য সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করা হয়েছে।
প্রায় এক বছর আগে হাওড়া জেলা প্রশাসন ২ নম্বর জাতীয় সড়ককে ৩৫ ফুট চওড়া করার লক্ষ্যে ওই জমি অধিগ্রহণ করেন। সেই সময় প্রশাসন মাইকে প্রচারের পাশাপাশি রাস্তার জন্য নির্ধারিত জমি চিহ্নিত করে পিলারও গেঁথে দেয়। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই হাত বদল!
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাওড়ার রিজিওনাল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং) রবিশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই জমি পূর্ত দফতরের কাছ থেকে আমরা ৬৪ লক্ষ টাকায় কিনেছি।’’ কিন্তু জাতীয় সড়ক সংস্থার অধিগৃহীত জমির তালিকায় এখনও দাগ নম্বর-সহ ওই জমি রয়েছে। ওই জমি তারা বিক্রি করেনি, এমন দাবিও করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তা হলে পূর্ত দফতরের কাছে ওই জমি গেল কী ভাবে? পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, কাগজপত্র দেখেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংস্থার কর্তাদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের পুরো বিষয়টিই স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে হয়। এই কাজে তাঁদের কিছু করার নেই। জেলাশাসক স্বাতী চক্রবর্তী অবশ্য বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
ষাটের দশকের গোড়ায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তা তৈরির জন্য হাওড়ার বালিতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। সিসিআর সেতু পর্যন্ত বালি মৌজাতেও জমি অধিগ্রহণের কাজ হয়। জাতীয় সড়ক উচুঁ করার জন্য সেই সময় অধিগৃহীত বহু জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়। তার ফলে মাটি কাটা অংশের বহু জমি জলাভূমিতে পরিবর্তিত হয়। পরে তা বুজিয়েও দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায় অভিযুক্ত কিছু জমি-মাফিয়া ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার জেরে ওইসব সরকার অধিগৃহীত জমি টাকার লোভে পুরনো পরচা দিয়ে কারচুপি করে তারা চড়া দামে বিক্রি করছে। এলাকার আরও বহু জমিও একই ভাবে হাতবদল হচ্ছে।
কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব? ভূমি দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি, কোনও ভাবে জমি-মাফিয়ারা কোনও জমির সাবেক পরচা (আরএস) জোগাড় করছে। পরে তা ভূমি দফতরে নতুন করে আর নামপত্তন (মিউটেশন) করছে না। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট জমিটির ক্ষেত্রে পুরনো মালিকের নামই নথিতে থেকে যাচ্ছে। ফলে, মালিকানা কার, তা নিয়ে অষ্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে। এই ফাঁকেই কাজ হাসিল করছে জমি-মাফিয়ারা।
বালি এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, জাতীয় সড়কের পাশে অনেক সরকারি জমিই এ ভাবে হাতবদল হয়েছে। সেখানে বাড়ি, পানশালাও গড়ে উঠেছে। মৎস্য দফতরও জানিয়েছে, ওই এলাকায় তাদের অনেক জমি বেহাত হয়ে গিয়েছে। একাধিক শুনানিতে ওই জমিতে যাঁরা বাস করছেন, তাঁদের ডাকা হয়েছে। জমির কোনও কাগজই তাঁরা দেখাতে পারেননি।
এলাকাবাসীর দাবি, এই জমি দখল রুখতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক সরকার।