মা মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন ছেলেকে। নিজস্ব চিত্র
একতলা বাড়িটার সামনে ভিড়। কারও হাতে মিষ্টির প্যাকেট, কারও হাতে ফুল। অপেক্ষা ভিতরে ঢোকার জন্য। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা ঘুরছে বাড়ির অন্দরে।
চুঁচুড়ার আমড়াতলা গলির এই বাড়ির ছেলে ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯৯ নম্বর পেয়েছে। শুক্রবার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ৪৯৯-ই সর্বোচ্চ নম্বর। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় নায়ক বনে গিয়েছে ছেলেটি। অভিনন্দন জানাতে ভিড় জমে বাড়ির সামনে।
ছোট থেকেই ঐক্য মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণি থেকে সে হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে পড়েছে। বাবা সমরেশবাবু ওই স্কুলেরই শিক্ষাকর্মী। ক্লাসে ওঠার পরীক্ষায় বরাবর প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থেকেছে ঐক্য। মাধ্যমিকে ৯৫% নম্বর পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পড়েছে। প্রতি বিষয়ে এক জন করে গৃহশিক্ষক ছিল তার। তবে বাড়িতে পড়ার ধরাবাঁধা কোনও নিয়ম ছিল না।
মা রেখাদেবী জানান, শুধু বই পড়াকেই ছেলে ধ্যানজ্ঞান করেনি। কখনও ছুটেছে আঁকা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। কখনও বিতর্ক বা ক্যুইজে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে কুড়িয়ে এনেছে পুরস্কার। রেখাদেবী বলেন, ‘‘আর পাঁচটা ছেলের মতোই ঐক্য ছোট থেকে দস্যিপনা করেছে। বড় হয়ে আঁকার প্রতি মনোযোগ বেড়েছে। মন দিয়ে পড়াও চালিয়ে গিয়েছে।’’
সমরেশবাবুও বলেন, ‘‘নিজের তাগিদেই ছেলে সব কিছু করে। আমাদের আলাদা করে কোনও কিছুর জন্য কোনও দিন চাপ দিতে হয়নি।’’
প্রতিবেশীদের গলাতেও গর্ব। অনেকেই বলেছেন, সব দিক সামলে যে অমন মারকাটারি নম্বর করা যায়, দেখিয়ে দিল ছেলেটা! পৈতৃক বাড়ির খানিক দূরে আমড়াতলা সরকারি আবাসনের একতলায় ঐক্যদের ফ্ল্যাটও রয়েছে। দু’জায়গাতেই এঁকে ঘরের দেওয়াল ভরিয়ে দিয়েছে সে।
ঐক্য জানায়, ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায়। আঁকা, ক্যুইজ বা বিতর্কও সমানতালে চালিয়ে যেতে চায়। তাঁর কথায়, ‘‘সবটা নিয়েই আমি বাঁচি।’’
ভাল ফলের জন্য বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি শিক্ষকদের অবদানকে কৃতিত্ব দিচ্ছে সে। তাঁর একটাই আক্ষেপ, লকডাউন পরিস্থিতির জন্য তিনটি পরীক্ষা দিতে না-পারায়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন গোস্বামী বলেন, ‘‘ঐক্য আমাদের স্কুলের গর্ব। সব দিক বজায় রেখেও এত ভাল ফল করা যায়, এটা দৃষ্টান্ত।’’