অফুরান: হাওড়া জেটিঘাটে জমা হওয়া খুচরো। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
এ যেন উলটপুরাণ!
আগে নোটের বদলে খুচরো পেতে নির্দিষ্ট অঙ্কের ‘বাটা’ দিতে হত। এখন খুচরো বদলে নোট পেতে ‘বাটা’ দিতে হচ্ছে। আর এই অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে জলপথ পরিবহণ সংস্থাগুলি।
নোটবন্দি পর্বের পরে, সম্প্রতি ব্যাঙ্কগুলি খুচরো পয়সা জমা নিতে অস্বীকার করায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে জলপথ পরিবহণ সংস্থাগুলির অফিসে বস্তা বস্তা খুচরো জমে গিয়েছে। সেই খুচরো পাল্টে নোট করতে না-পারায় অন্য সংস্থার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে। এমনকী নোট না-থাকায়, একটি জলপথ পরিবহণ সংস্থায় চলতি মাসে কর্মীদের বেতনও দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ খুচরো পয়সায়!
হাওড়া-কলকাতা জলপথ পরিবহণের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’ সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে ব্যাঙ্ক খুচরো পয়সা না-নিতে চাওয়ায় জমা টাকার (ডিপোজিট) পরিমাণ কমছে। ফলে এক দিকে যেমন তেল সরবরাহকারী সংস্থা-সহ অন্য সংস্থাগুলিকে বকেয়া টাকা মেটানো যাচ্ছে না, তেমনই খুচরো পয়সা রাখার আর জায়গা হচ্ছে না। বিভিন্ন লঞ্চঘাটের দফতরে জমা হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার খুচরো। যেমন আহিরীটোলা লঞ্চঘাট পরিচালক ইন্দো-সুইস ট্রেডিং সংস্থা। তার অন্যতম ডিরেক্টর দেবশ্রী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের প্রায় ৩ লক্ষ টাকার খুচরো পয়সা জমে গিয়েছে। বস্তা করে সব রাখা আছে। ব্যাঙ্ক খুচরো জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় নোটের অভাবে খুচরোয় বেতন নিতে হয়েছে।’’
দেবশ্রীর আশঙ্কা, এই ভাবে চললে আর কয়েক মাসের মধ্যে জলপথ পরিবহণ মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ যাত্রীরা যেমন খুচরো নিতে চাইছেন না, তেমনই লঞ্চ সার্ভিস চালানোর জন্য যাঁদের কাছ থেকে জিনিসপত্র নিতে হয়, তাঁরাও খুচরো পয়সা নিতে অস্বীকার করছেন। ফলে একটা ডামাডোল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির দফতরে গিয়ে দেখা যায়, খুচরো নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সংস্থার কর্মীরা। এত খুচরো কোথায় কী ভাবে রাখবেন, ভেবেই ঘুম উড়ে গিয়েছে অফিসার ও কর্মীদের। এক মহিলা কর্মী বললেন, ‘‘সারা দিনের টিকিট বিক্রির খুচরো টাকা হিসেব করে তুলে রাখতে গিয়ে অফিস থেকে বেরোতে রাত ১০টা বেজে যাচ্ছে রোজ। জানি না এই সমস্যা কবে মিটবে।’’
ওই সংস্থার সম্পাদক অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জল পরিবহণে যাত্রী ভাড়া ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা। এখন বাজারে ঢালাও খুচরো এসে যাওয়ায় বেশির ভাগ যাত্রী খুচরোতেই টিকিট কাটছেন। কিন্তু তাঁদের কাউকে কাউকে যখন কাউন্টার থেকে খুচরো পয়সা ফেরত দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা তখন নিতে চাইছেন না। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার খুচরো জমে যাচ্ছে সংস্থার দফতরে। যা সামাল দিতে রোজ হিমসিম খাচ্ছেন কর্মীরা।
সূত্রের খবর, প্রতি দিন ওই সংস্থার বিভিন্ন ঘাট থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়। যার মধ্যে খুচরো থাকে ৫০ হাজার টাকার। এত খুচরো রাখার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েক ডজন অ্যালুমিনিয়ামের বাক্স কেনা হয়েছে। আরও কতগুলো বাক্স কিনতে হবে, তার হিসেব চলছে এখন।