ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমাতে শ্রীরামপুরে গঙ্গার জল শোধন করে সরবরাহ প্রকল্পের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এ জন্য ৭০ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।
এই প্রকল্পে বর্তমান জলকল ভেঙে দিয়ে সেখানে নতুন করে যাবতীয় ব্যবস্থা গ়ড়ে তোলা হবে। জল তোলার পরিকাঠামো থেকে জেটি সংস্কার করা হবে। জলের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। পাইপলাইন বদলানো হবে। পুরকর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত প্রকল্পে এখনকার তুলনায় ১০ গুণ বেশি জলধারণ ক্ষমতা থাকবে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে। প্রকল্পটি চালু হলে অনেকগুলি গভীর নলকূপ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে।
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়া। এটা করতে গিয়ে গভীর নলকূপ বসানো ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তবে, প্রস্তাবিত জলকলে জল ধারণ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে। তাতে সব দিক থেকেই ভাল হবে। জল সরবরাহের ক্ষেত্রে পুরসভার খরচও কমবে।’’
গঙ্গার জল পরিশোধন করে বাড়ি বাড়ি পাঠাতে শ্রীরামপুর পুরসভায় জলকল তৈরি হয় ১৯৩৬ সালে। এটির জলধারণ ক্ষমতা .৫ মিলিয়ন গ্যালন। বর্তমানে অন্তত তিনটি ওয়ার্ডের জলের চাহিদা এর মাধ্যমে পূরণ হয়। শহরে জলের চাহিদা অবশ্য অনেক বেশি (প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন গ্যালন)। সে জন্য গভীর নলকূপের উপরে অনেকটা নির্ভর করতে হয়। এই মুহূর্তে পুর-এলাকায় ৩৪টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গভীর নলকূপের জন্য একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় এবং ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনই বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণ বা কর্মীর পিছনে প্রচুর খরচ হয়। তা ছাড়া, একটি গভীর নলকূপ ১০-১২ বছরের বেশি টেঁকে না। বিগড়ে গেলে সেটির পরিবর্তে নতুন গভীর নলকূপ বসাতে হয়।
এই অবস্থায় পুরসভার তরফে কেন্দ্রের ‘অটল মিশন ফর রিজুভিনেশন আরবান ট্রান্সফর্মেশন’ প্রকল্পে ১৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রের নির্দেশে কেএমডিএ বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেয়। প্রথম পর্যায়ের কাজে কেন্দ্র ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্র অর্ধেক টাকা দিচ্ছে। ৪৫% টাকা দেবে রাজ্য সরকার। বাকি ৫% টাকা পুরসভার তহবিল থেকে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। দু’-এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।
বর্তমানে পুর-এলাকায় ছ’টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক আছে। আরও ৪টি ট্যাঙ্ক তৈরি করা হবে। এগুলি হবে চাতরার পিএন মুখার্জি স্ট্রিট, বোসপাড়া, প্রভাসনগর এবং জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি রোডে। এর মধ্যে জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি রোডে যে ট্যাঙ্কটি আছে, সেটি ভেঙে নতুন করে গড়া হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ১২, ১৩, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জল সরবরাহে সমস্যা হবে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই সব জায়গার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে তবেই কাজ শুরু করা হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে জল সরবরাহের বন্দোবস্ত করা হবে।