আবর্জনা: এমনই অবস্থা তারকেশ্বর দুধপুকুরের। নিজস্ব চিত্র
মাছ মরছে। স্নান করা, বাসন মাজা, জামাকাপড় কাচা— সবই চলছে। ফের দূষণের গ্রাসে তারকেশ্বরের দুধপুকুর।
কয়েক বছর দূষণমুক্ত ছিল তারকেশ্বর শিবমন্দির লাগোয়া ঐতিহ্যবাহী ওই পুকুর। কিন্তু বর্তমানে দূষণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে ফের সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য জানান, দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়ের দশকের শেষ দিকে বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় দুধপুকুরের দূষণ নিয়ে প্রথম সরব হন। সেই সময় তিনি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়কে পুকুরের দূষণ নিয়ে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়, পুকুরের আশপাশের বেশির ভাগ বাড়িরই নিকাশি ব্যবস্থা ওই পুকুরের সঙ্গে যুক্ত। সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়। সেই সময় সরকারি মধ্যস্থতায় দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত রাখতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বি়জ্ঞানীরা একটি ইউনিট তৈরি করেন। যার সাহায্যে শিবের মাথায় যে দুধ মিশ্রিত জল ঢালা হয় তা সরাসরি পুকুরে মিশত না। ওই ইউনিটের মাধ্যমে দূষণমুক্ত হয়ে পুকুরে যেত। কিন্তু সেই ইউনিট বেশ কয়েক বছর ধরে খারাপ হয়ে রয়েছে।
২০১৫ সালে ফের একবার দূষণের অভিযোগ ওঠায় হুগলি জেলা জজ নিজে বৈঠক করে তারকেশ্বর দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত করার ব্যাপারে কিছু নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। তারকেশ্বর পুরসভা, মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে পুকুর দূষণমুক্ত করার ব্যাপারে সক্রিয় হতে বলেন। জেলা জজের সেই নির্দেশের পর প্রশাসনিক মহলে প্রাথমিক ভাবে কিছু নড়াচড়া হয়। কিন্তু তার পর সেই সব উদ্যোগ অনেকটাই থিতিয়ে যায়।
ওই মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী আসেন। অনেকেরই প্রশ্ন, জেলা জজ নির্দেশ দেওয়ার পরেও তারকেশ্বরের দুধপুকুরকে দূষণমুক্ত রাখার ব্যাপারে কেন খামতি থেকে যাচ্ছে? ওই পুকুরে অনেক পুণ্যার্থী স্নান করেন। পুকুরের জল চরণামৃত হিসেবে বিলি করা হয়। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘ওই পুকুর দূষণমুক্ত করা না হলে অসুখের সম্ভাবনা থেকে যায়।’’
মন্দিরের দুধ-জল আলাদা করার ইউনিটটি এখনও সারানো হয়নি। বর্তমানে পুকুরের জলকে নিত্য প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। সে সব বন্ধে কারও মাথাব্যথা নেই বলে মন্দিরেরই একটি সূত্রের খবর। পরিবেশপ্রেমীদের প্রশ্ন, মন্দির থেকে যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হয়, সেখানে কেন সেই আয়ের একাংশ দুধপুকুর পরিষ্কার রাখার কাজে ব্যয় হবে না? কেন বারবার সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে?
মন্দির কমিটির পক্ষে কেউ কোনও কথা বলতে চানি। তবে, তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, দুধপুকুরের অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।