ভাসল জনপদ, ত্রাণ শিবিরে দুর্গতরা

ভিলেন দ্বারকেশ্বর, জলের তোড়ে তলিয়ে গেলেন প্রৌঢ়

গত শনিবার থেকে জল ছাড়তে শুরু করেছে ডিভিসি। তার জেরে হুগলির আরামবাগ মহকুমা এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায় প্লাবনের আশঙ্কা করেছিল সেচ দফতর। মঙ্গলবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। তবে, বেঁচে গিয়েছে আমতা। কী অবস্থা দুর্গতদের? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।তলিয়ে গেলেন প্রৌঢ়। দ্বারকেশ্বর এ বার একাই ডুবিয়ে দিল আরামবাগ শহর-সহ গোঘাট, খানাকুল-১ এবং আরামবাগ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

দ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে খানাকুলের ঘাসোয়ায়।ছবি:মোহন দাস

তলিয়ে গেলেন প্রৌঢ়।

Advertisement

দ্বারকেশ্বর এ বার একাই ডুবিয়ে দিল আরামবাগ শহর-সহ গোঘাট, খানাকুল-১ এবং আরামবাগ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা। সোমবার রাতে পুরসভা এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডই লন্ডভন্ড করে দেয় দ্বারকেশ্বর নদী। মঙ্গলবার সকালে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দিনমজুর কালীপদ দিগার (৬০) নিজের ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে যেতে এসেছিলেন। কিন্তু আর ফিরলেন না। জলের স্রোতে তিনি তলিয়ে যান। প্রশাসন চেষ্টা করেও তাঁর খোঁজ পায়নি।
ডিভিসি-র ছাড়া জল নদী উপচে ডুবিয়ে গিয়েছে আরামবাগ মহকুমার বেশ কিছু এলাকাকে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে দুর্গতদের। আনা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। অনেক জায়গাতেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মহকুমা ত্রাণ আধিকারিক সৌমেন দাস জানিয়েছেন, সর্বত্র প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মোট ৩২টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রিয়ম পাল বলেন, “বাঁধে নজরদারি চলছে। চরম বিপদসীমা অতিক্রম করে যাওয়া দ্বারকেশ্বর নদীর জলের চাপ কমছে।’’ এ দিন রাতের দিকে আরামবাগে আসেন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত ও সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।

Advertisement

বন্ধ যান চলাচল। স্রোত ভেঙে যাতায়াত। আরামবাগের কালীপুরে মোহন দাসের তোলা ছবি।

আরামবাগ পুর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সতীতলায় জলের চাপে স্লুইস গেট ভেঙে যাওয়ায় জলমগ্ন হয় বিস্তীর্ণ পুর এলাকা।এ ছাড়াও শহর এলাকার বিভিন্ন নদীবাঁধ উপচে জল ঢুকে যায় ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রায় দু’হাজার দুর্গতকে ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়।
মঙ্গলবার ভোরে দ্বারকেশ্বরে চরম বিপদসীমা থেকে প্রায় ২ মিটার বেশি উচ্চতা দিয়ে জল বইছিল। সেই জলের চাপে খানাকুল ১ ব্লক এলাকার কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েতের ঘাসুয়া এবং গুজরাতে দু’টি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘোষপুর, পোল-২, ঠাকুরানিচক-সহ মোট ৫টি পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন হয়। রাস্তার জল উঠে যাওয়ায় আরামবাগ-বন্দর রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই দ্বারকেশ্বরের কারণেই গোঘাটও মহকুমা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গোঘাট ১ ব্লকের বালি, কুমুড়শা এবং ভাদুর পঞ্চায়েতের প্রায় ১২টি গ্রাম জলমগ্ন। ফলে আরামবাগ-বালি, আরামবাগ-কামারপুকুর এবং আরামবাগ-বেঙ্গাই তিনটি প্রধান রাস্তাতেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জলমগ্ন হয় আরামবাগের সালেপুর-১, সালেপুর ২ ও গৌরহাটি ১ পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত ২০টি গ্রাম। ফলে, এখানে আরামবাগ-শ্রীমন্তপুরের মধ্যে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দামোদর এখনও কোনও ক্ষয়ক্ষতি না করায় কিছুটা স্বস্তিতে পুরশুড়া ও খানাকুলের একাংশের গ্রামবাসী। তবে, নদীর চোখরাঙানিতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন সেচ দফতরের কর্তারা। কেননা, দামোদর ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ দিন সকাল থেকেই দামোদরের জল চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে। তবে আরামবাগ মহকুমার অংশে দামোদরের দু’পাড় এখনও অটুট আছে। আপাতত সেটাই ভরসা দিচ্ছে গ্রামবাসীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement