বন্ধ রাখা হয়েছে এই ওয়াটার বাসের পরিষেবা। —নিজস্ব িচত্র
‘বাংলাশ্রী’র পরে এ বার ‘ওয়াটার বাস’। মুখ খুবড়ে পড়ল আর এক পরিবহণ পরিষেবা।
চন্দননগর কলকাতার সঙ্গে জলপথে জোড়ার জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে গঙ্গাবক্ষে ভেসেছিল বাতানুকুল ১৫৭ আসনের ‘ওয়াটার বাস’। তারপর এক পক্ষকালও কাটেনি। ওই পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চন্দননগর পুরসভা। সোমবার বিকেলে পুরকর্তৃপক্ষের তরফে চন্দননগর রানিঘাটে পরিষেবা বন্ধের নোটিস ঝোলানো হয়।
চন্দননগর পুরসভার কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় আপাতত পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন কিছুটা শিথিল হলে ফের তা চালু করা হবে।’’ পরিবহণ দফতর ও চন্দননগর পুরসভার যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় পরিষেবা। ওয়াটার বাস চলত সপ্তাহে তিনদিন। যাত্রী পিছু ভাড়া ছিল ৩২০ টাকা।
লকডাউন-কে পরিষেবা বন্ধের কারণ বলে পুরসভা দায়ী করলেও তাদের যুক্তি মানতে নারাজ যাত্রীদের একাংশ। তাঁদের মতে, লকডাউন না হলেও পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেত। কারণ, প্রতিদিন জলযানে চন্দননগর থেকে কলকাতা যাতায়াতের জন্য ৬৪০ টাকা খরচ করা কোনও নিত্যযাত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। যাত্রী না-হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে পরিষেবা বন্ধ করেছে পুরসভা। লকডাউন-কে অজুহাত হিসাবে খাড়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ। জলযান পরিষেবা শুরুর দিনই যাত্রীদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ লক্ষ্য করেছিলেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। সেদিনই ঘোষণা করা হয়, পরে ভাড়া ৭০ টাকা কমানো হবে।
বছর দুয়েক আগে সড়কপথে চুঁচুড়ার সঙ্গে কলকাতা সংযোগের জন্য চালু হয়েছিল বাতানুকুল বাংলাশ্রী বাস। কিন্তু যাত্রী না-হওয়ায় পরিষেবা বন্ধ করে দেয় পরিবহণ দফতর।
পুরসভা সূত্রে খবর, প্রথম দিকে জলযানে ৪৫-৬৫ জন যাত্রী যাতায়াত করতেন। পরে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৫-৩০। ওয়াটার বাসের আসন সংখ্যা ১৫৭ হলেও করোনা-পরিস্থিতির জন্য দূরত্ব-বিধি মেনে ১০০ জন যাত্রী বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ওয়াটার বাস চালাতে প্রত্যেক দিন ১৫০ লিটার জ্বালানি প্রয়োজন। আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে দেখা যায়, দৈনিক ১৪ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে পুরসভার।
ওয়াটার বাস বন্ধ হওয়ার কোনও প্রভাব নিত্যযাত্রীদের মধ্যে পড়েনি। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘এক বার বেড়াতে যাওয়ার জন্য ওয়াটার বাসে চাপা যেতে পারে। কিন্তু কর্মস্থলে নিত্য যাতায়াতের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ওই পরিষেবা মোটেই উপযোগী নয়।’’ চন্দননগরের বাসিন্দা সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘এক দিন পরিবারের সকলকে নিয়ে জলযানে চেপে কলকাতা গিয়েছিলাম। গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ উপভোগ করাই ছিল উদ্দেশ্য। এই পরিষেবা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ।’’