পাশে-আছি: পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য বাণীবনের দক্ষিণপাড়ায় চলছে বৈঠক। —নিজস্ব িচত্র
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা নিয়ে রাজ্য জুড়ে অশান্তি লেগেই রয়েছে। অধিকাংশ এলাকার স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্রে ওই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের উদ্যোগে। আর সেখানে বাধা দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। এর উল্টো চিত্র উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বাণীবন দক্ষিণপাড়ায়।
সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য বৈঠক করেছেন বাসিন্দারা। দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন নিজেদের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন ১৭ জন শ্রমিক। খবর পেয়েই গ্রামসম্পদ কর্মী, আশাকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররা গ্রামের মানুষকে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরির কথা জানান। গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে নিজেরাই গ্রামের শ্মশান মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে সভা করেন। সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র করা হবে। ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবেন গ্রামের মানুষ।
বাণীবন দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ভোলা রায় ও রাজু সিংহ বলেন, ‘‘গ্রামের ছেলেরাই কাজের জন্য ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন। তাঁরা বাড়ি ফিরলে গ্রাম ছাড়া আর কোথায় থাকবেন?’’ সনাতন রায় নামে এক গ্রামবাসী জানান, পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরলে তাঁদের প্রথমে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হবে। যদি করোনা উপসর্গ না পাওয়া যায়, তাহলে গ্রামের মধ্যেই প্রাথমিক স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্রে ১৪ দিন থাকবেন। অন্য এক গ্রামবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাতে কলাপাতা বা কাগজের পাতা করে নির্দিষ্ট জায়গায় খেতে দিয়ে আসা হবে।
করোনা আতঙ্কে বিভিন্ন এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাস কেন্দ্র করা নিয়ে গোলমাল লেগেই আছে। কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও স্কুলের গেটে চাবি দিয়ে অবরোধ চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার গ্রামের মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে। কোথাও প্রশাসনকে বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে। শনিবার উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের তুলসীবেড়িয়া গ্রামে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাসে থাকা ঘিরে দুই পাড়ার মধ্যে গোলমাল হয়। বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। আহত হন কয়েকজন গ্রামবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণপাড়ার এমন ভূমিকা আশাব্যঞ্জক বলেই মত প্রশাসনের। উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বিডিও নিশীথকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘ব্লক এলাকায় মোট ৩২ টি স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র করা হয়েছে। সব জায়গায় গ্রামের মানুষকে সহযোগিতা করতে বলা হচ্ছে। দক্ষিণপাড়ার এই সচেতনতায় আমরা খুশি।’’