ফাইল চিত্র
আরামবাগে বেআইনি বালি-কারবারের সঙ্গে শাসকদলের একাংশের যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে অনেকবার। তৃণমূলের অন্দরে এ নিয়ে চাপানউতোর লেগেই থাকে বলে দলীয় সূত্রের খবর। খানাকুলে ত্রাণ বণ্টন নিয়ে শাসকদলের অন্দরে যে ‘কোন্দল’ চলছে, তা নিয়ে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ফের ওই অভিযোগকে সামনে এনে ফেলল।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে খানাকুলের জলবন্দি মানুষকে ত্রাণসামগ্রী বিলি করেন কল্যাণ এবং জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁর বিলি করা খাদ্যসামগ্রীর গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলেরই পঞ্চায়েত স্তরের একাধিক জনপ্রতিনিধি এবং নেতা। তাঁদের অনেকেই আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত। শ্রীরামপুরের সাংসদ কেন আরামবাগ মহকুমায় এসে খাদ্যসামগ্রী বিলি করবেন, সেই প্রশ্নও তাঁরা তুলেছেন। নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী বিলির অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন কল্যাণ ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এ দিন ওই অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে কল্যাণবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমি আরামবাগে ঢুকলে অনেকেরই অসুবিধা হয়। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, ওখানে বেআইনি বালির কারবার রমরমিয়ে চলে।’’
সাংসদের এই মন্তব্য ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মতে, নাম না করে কল্যাণ নিশানা করতে চেয়েছেন আরামবাগে বেআইনি বালি-কারবারে যুক্ত দলের নেতাদের। তবে কাদের উদ্দেশে তাঁর ওই মন্তব্য, তা খোলসা করেননি কল্যাণবাবু। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘বাকিটা বুঝে নিতে হবে।’’
শ্রীরামপুরের সাংসদের এ হেন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের অপরূপা-ঘনিষ্ঠ নেতৃত্ব। সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে অপরূপার মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘উনি (কল্যাণ) শ্রদ্ধেয় মানুষ। তবে উনি আইনজীবী বেশি, সাংসদ কম। আর বালি নিয়ে বেআইনি কারবারে কারা জড়িত, তা উনিই খুঁজে বার করুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দল চাইলে ওই বেআইনি বালি-কারবার আরামবাগ থেকে উৎখাত করতে ওঁকে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিটি গড়া হোক। আমি যে কোনও অগ্নিপরীক্ষা দিতে রাজি। আমাকে উনি দোষী প্রমাণ করতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেব।’’ মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর ও দ্বারকেশ্বরের বালির বেআইনি কারবার চলে আসছে বাম আমল থেকেই। তৃণমূল জমানায়-ও তা অব্যাহত। অভিযোগ, এখন বেআইনি কারবারের নিয়ন্ত্রণ করেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব এবং সরকার বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করতে কিছু পদক্ষেপ করলেও আরামবাগে বেআইনি বালি-কারবারে লাগাম পরানো যে যায়নি, তা কল্যাণের মন্তব্যেই পরিষ্কার বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।