ভাঙচুর হওয়া মোটরবাইক। শালিমারের সেই আবাসনে। —নিজস্ব চিত্র।
দাবি মতো টাকা না পেয়ে দিনেদুপুরে একটি আবাসনে ঢুকে প্রায় এক ঘণ্টা তাণ্ডব চালাল একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। বুধবার এমনই অভিযোগ তুলেছে হাওড়ার শালিমারের একটি পরিবার। অভিযোগ, ঘটনার সময়ে পুলিশকে দফায় দফায় ফোন করলেও সাহায্য পাননি আক্রান্তেরা। উপরন্তু, ঘটনার পরে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ সাহায্য না করে আক্রান্তদেরই এক জনকে থানায় আটক করে রাখে বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ উঠেছে, দুষ্কৃতীদের এক সাহায্যকারীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে এলে তাঁকে ছাড়াতে থানায় ঢুকে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের ঝাণ্ডাধারী কিছু লোকজন।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরে ফের দুষ্কৃতী-তাণ্ডব বাড়লেও পুলিশের ভূমিকা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। অন্তত বুধবারের ঘটনা তেমনটাই প্রমাণ করে।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দক্ষিণ হাওড়ার শালিমার কলেজ ঘাট রোড়ের রবীন্দ্রনগর আবাসনে এল ব্লকের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে সপরিবার থাকেন লেবার কন্ট্র্যাক্টর দয়ানন্দ পাণ্ডে। পরিবারের বড় ছেলে অনিল পাণ্ডে শালিমার ইয়ার্ডের পরিবহণ ব্যবসায়ী। ওই পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই শালিমার পাঁচ নম্বর গেটে অনিলের পরিবহণ অফিসে গিয়ে কয়েক জন যুবক নানা কারণে টাকা দাবি করছিল। সম্প্রতি সেই দাবি বেড়ে যায়। গত সোমবার রাতে পরিবারের ছোট ছেলে রামঅবতার পাণ্ডে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন ওই যুবকেরা তাঁকে ঘিরে ফেলে অস্ত্র দেখিয়ে টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। না দিলে প্রাণে মারারও হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
অভিযোগ, এর পরেই এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ওই বাড়ির একতলার বাসিন্দা পবন কুমার নামে এক যুবক পরিবারের বড় ছেলেকে শালিমার পাঁচ নম্বর গেটের সামনে থাকা যুবকদের দাবি মতো টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা বাধে। মারামারিও হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পাণ্ডে পরিবারের অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে পবনের ফোন পেয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২০-৩০ জন দুষ্কৃতী রিভলভার, ছুরি, ভোজালি, রড, বাঁশ নিয়ে আক্রমণ করে।
পুলিশ জানায়, আক্রমণকারীরা প্রথমে আবাসনের নীচে রাখা ওই পরিবারের তিন ভাইয়ের তিনটি মোটরবাইক বাঁশ দিয়ে ভাঙচুর করে। এর পরে আবাসনের তিনতলায় উঠে গিয়ে শাবল দিয়ে লোহার কোল্যাপসিবল গেট ভাঙার চেষ্টা করে। বড় বড় থান ইট দিয়ে আঘাত করে সদর দরজায়। সমস্ত আলো ভেঙে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চালালেও সশস্ত্র দলটির কাছে কেউ ঘেঁষতে পারেননি।
এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের রাস্তায় পড়ে রয়েছে ভাঙচুর হওয়া তিনটি মোটরবাইক। তিনতলায় পাণ্ডে পরিবারের ফ্ল্যাটের সামনে পড়ে রয়েছে তিন-চারটি বাঁশ, ইটের টুকরো, টিউবলাইটের ভাঙা কাচ। কোল্যাপসিবল গেটের একটি অংশ দেওয়াল থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে।
নিজের ঘরে বসে পরিবারের কর্তা দয়ানন্দ পাণ্ডে বলেন, ‘‘গত দেড় বছর ধরেই আমাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে ওরা। এখন সেটা আরও বেড়ে গিয়েছে। টাকা না দেওয়াতেই ওরা আজ এই কাণ্ড করেছে।’’
দয়ানন্দবাবুর স্ত্রী বেবি পাণ্ডে বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা উপরে উঠে আসার আগেই আমি কোনও রকমে কোল্যাপসিবল গেটে তালা লাগাতে পেরেছিলাম। না হলে ওরা আমাদের সকলকে হয়তো মেরেই ফেলত।’’
ওই পরিবারের লোকজন এবং আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার সময়ে পুলিশকে বারবার ফোন করা হয়। কিন্তু পুলিশ আসে দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার পরে ওই পরিবারের বড় ছেলে অনিল স্থানীয় বটানিক্যাল গার্ডেন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁর অভিযোগ না নিয়ে তাঁকেই আটক করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। ওই পরিবারের আরও অভিযোগ, ঘটনার মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে পুলিশ পবন কুমারকে গ্রেফতার করে আনে। অভিযোগ, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝান্ডা নিয়ে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান কিছু তৃণমূল সমর্থক।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনাটি দু’টি পরিবারের মধ্যে গোলমাল ও মারামারি। তাই দু’পক্ষকেই আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনও তোলাবাজির ব্যাপার নেই। তা ছাড়া, এ নিয়ে কেউ থানায় কোনও অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’