অপেক্ষায়: দমকলের নতুন ভবন। —নিজস্ব চিত্র।
ভবন তৈরি। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের নীল-সাদা রঙের পোঁচও পড়েছে কবেই! কিন্তু পান্ডুয়ায় দমকল কেন্দ্র চালু কবে হবে, তার সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছে।
পান্ডুয়ায় একটি দমকল কেন্দ্রের জন্য স্থানীয় মানুষের দাবি বহুদিনের। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই এখানে দমকল কেন্দ্র গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়। এর জন্য ২০১৪ সালে কৃষি বিপণন দফতরের অধীন পান্ডুয়া নিয়ন্ত্রিত বাজারে এক বিঘা জমিও পাওয়া যায়।
দমকল সূত্রে খবর, প্রস্তাব অনুযায়ী আপাতত জিটি রোডের ধারে এই দমকল কেন্দ্রে ৪টি ইঞ্জিন থাকার কথা। বছর দুয়েক আগে দোতলা ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। চারপাশে পাঁচিল ঘেরা ভবনের প্রবেশপথে লোহার গেট বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও শেষ। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দমকলের গাড়ি আর কর্মী নিয়োগ ছাড়া পরিকাঠামো কার্যত পুরো তৈরি।’’ কিন্তু কবে উদ্বোধন হবে এই কেন্দ্রের? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি দমকল থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক কারও কাছেই।
কবে দমকল কেন্দ্র চালু হবে, প্রশ্নের জবাবে পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।’’ পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের কটাক্ষ, ‘‘রাস্তা, বিল্ডিং করলে শাসক দলের নেতাদের পকেট ভরে। দমকল কেন্দ্রের মতো কাজে হয়তো ততটা সুযোগ নেই। তা ছাড়া, দমকল দফতরের না আছে পর্যাপ্ত কর্মী, না পরিকাঠামো। তাই প্রকল্পটি বিশ বাঁও জলে।’’ তবে এলাকার সাংসদ, তৃণমূলের রত্না দে নাগ জানান, বিষয়টি নিয়ে আজ, সোমবার তিনি দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পান্ডুয়া ব্লকে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বাস। বেশ কিছু ছোটখাটো কারখানা আছে। অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দমকলের জন্য হা-পিত্যেশ করে থাকতে হয়। সবচেয়ে কাছের দমকল কেন্দ্র বাঁশবেড়িয়ায়। যেখান থেকে এসে পৌঁছতে অন্তত দেড় ঘণ্টা কেটে যায়। পান্ডুয়ায় কালীপুজোও বিখ্যাত। ফলে বাজিও ফাটে প্রচুর। বাজির আগুনে বিপত্তি ঘটলে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়, সে জন্য পুজো কমিটিগুলির দাবি মেনে প্রতি বছরেই বাঁশবেড়িয়া থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এখানে এনে রাখা হয়। আর তাই পুজো কমিটি থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই চান, পান্ডুয়ায় একটা দমকল কেন্দ্র হোক। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে এলাকায় কোথাও আগুন লাগলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই পান্ডুয়ার কলবাজারে একটি খড়বোঝাই ট্রাকে আগুন লাগে। অভিযোগ, খবর পাওয়ার পরে দমকলের পৌঁছতে দু’ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল। সম্প্রতি পান্ডুয়ার বেনেপাড়ায় একটি বাড়িতে রান্নার গ্যাস লিক করে আগুন লাগে। এ ক্ষেত্রেও দমকল দেরিতে আসে বলে অভিযোগ। দমকল সূত্রে খবর, পান্ডুয়ায় দমকল কেন্দ্র হলে বলাগড়, পোলবা-দাদপুর, ধনেখালিতেও অনেক কম সময়ে পৌঁছনো যাবে।
কিন্তু পরিকাঠামো তৈরির পরেও দমকল কেন্দ্র চালু না হওয়ায় পুরো বিষয়টিই প্রশ্নচিহ্নের মুখে।