মৃত উমা সিংহ পাল।
ফের দুর্ঘটনা মুম্বই রোডে। এ বার প্রাণ গেল দু’জনের। পথ নিরাপত্তা নিয়ে হাওড়া জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও এই জেলার মুম্বই রোডে দুর্ঘটনার তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। অভিযোগ, বেআইনি ভাবে অটো চলার জন্যই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
ভাইফোঁটায় জন্য ভাইকে নিমন্ত্রণ করে বাগনানের খালোড় থেকে অটোয় কুলগাছিয়ায় ফিরছিলেন মহিষরেখা পালপাড়ার উমা সিংহ পাল (৩৫)। ওই অটোতেই ছিলেন উলুবেড়িয়া চকভগবতীপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব বাগ (২২)। রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অটোটি যাত্রী নামানোর জন্য চন্দ্রপুর জেলেপাড়ার কাছে মুম্বই রোডের উপরে দাঁড়িয়েছিল। তখনই বালি বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার পিছনে ধাক্কা মারে। ট্রাকটি উল্টে যাওয়ায় যাত্রীরা বালি চাপা পড়ে যান। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা যাত্রীদের বালি সরিয়ে উদ্ধার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জীববাবুর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হয় উমাদেবীর।
মুম্বই রোডে দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। জাতীয় সড়ক হলেও এটির উপর দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই দেদার অটো চলে। লেন ভাঙার অভিযোগ তো রয়েছেই। পুলিশ কিংবা পরিবহণ দফতর বিষয়টি নিয়ে কারও হুঁশ নেই বলে অভিযোগ। মাস খানেক আগেই উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে অটো দুর্ঘটনায় দু’জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে এই জাতীয় সড়কে বার বার দুর্ঘটনায় পড়েছে অটো। মৃত্যুও হয়েছে। তার পরেও ছবিটা যে বদলায়নি রবিবার রাতের দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ।
মুম্বই রোড রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক প্রায় ৬০ হাজার ইউনিট (একটি ছোট গাড়িকে একটি ইউনিট ধরা হয়। তিনটি ছোট গাড়ির সমান ধরা হয় একটি বড় গাড়ি বা ট্রাককে) গাড়ি চলে এই রাস্তায়। ২০১০ সালে মুম্বই রোডকে চার থেকে বাড়িয়ে ছয় লেনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
মুম্বই রোড ব্যবহারের জন্য গাড়িগুলিকে টোল দিতে হয়। কিন্তু তার পরেও অটোর বাধায় বেশিরভাগ গাড়ি প্রয়োজনীয় গতি তুলতে পারে না বলে অভিযোগ। ফলে পিছন থেকে এসে ট্রাক ধাক্কা মেরে যায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘অটোগুলির থেকে টোল নেওয়া হয় না। অথচ তারা নিয়মিত মুম্বই রোডে চলাচল করছে। বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই হচ্ছে অটোগুলির জন্য। এই নিয়ে পুলিশের ভাবা উচিত।’’ জেলা পুলিশের কর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
অটো চালকেরা জানিয়েছেন, মুম্বই রোডে অটো চালানোর জন্য তাদের ইউনিয়নকে দৈনিক ১০ টাকা করে দিতে হয়। বাগনানে অটোচালকদের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত সংগঠনের সভাপতি বাপন কাজির দাবি, ‘‘যাত্রীরা চান বলেই মুম্বই রোডে অটো চলে। আমরা সব সময় সাবধানে অটো চালাতে বলি।’’
কুলগাছিয়া, রানিহাটি, ধূলাগড়ি, আলমপুর, জঙ্গলপুর প্রভৃতি জায়গায় মুম্বই রোডের দু’দিকে একাধিক কারখানা তৈরি হয়েছে। সেগুলিতে ঢোকা বা বেরোনোর সময় ট্রাক-ট্রেলারগুলিও কোনও নিয়ম মানে না বলে অভিযোগ। রাস্তা থেকে আচমকা ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে কারখানায় ঢোকে। বেরোনোর সময়েও একইভাবে আচমকা রাস্তায় উঠে আসে। তখন অন্য গাড়ি সামনে থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে।
জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, অটো ও ট্রাক চলাচলে লাগাম দেওযার দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের। কিন্তু তারা সেভাবে সক্রিয় নয়। জেলা পরিবহন দফতরের কর্তারা আবার জানিয়েছেন, কর্মী সংখ্যা কম থাকার কারণেই তাঁরা নিয়মিত অভিযান চালাতে পারেন না।
এই দড়ি টানাটানিতেই চলে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। রবিবারের দুর্ঘটনায় মৃত উমাদেবীর দাদা কিশোর সিংহের আক্ষেপ, ‘‘বোন নিমন্ত্রণ করে গেল। কিন্তু ওঁর হাতে ফোঁটাটা আর নেওয়া হলো না। এভাবে আর কত মৃত্যু হলে তবে হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের?’’