সন্ধান: জয়ন্ত মজুমদার ও সাহাদাদ কুরেশি (ইনসেটে) বাজ পড়েছিল এই স্পিডবোটেই (নীচে)। নিজস্ব চিত্র
কেউ জলে তলিয়ে গেলেই তাঁদের ডাক পড়ত। কয়েক মাস আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া জেটি ভেঙে যাওযার পরে টানা নয় দিন ধরে তাঁরা গঙ্গায় তল্লাশি চালিয়েছিলেন। কিন্তু শেষে তাঁদের দেহ উদ্ধার করতে নামাতে হল ডুবুরি। একটি দেহ উদ্ধার হল চন্দননগরের ইটভাটার চড়ায়, অন্যটি নৈহাটির গঙ্গা থেকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে দুর্গাপুজো ভাসানের সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে অন্নপূর্ণা ঘাট সংলগ্ন গঙ্গাবক্ষে স্পিডবোটে টহল দিচ্ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তিন জন কর্মী। হঠাৎই সেই বোটের উপরে বাজ পড়ে। বোটটি উল্টে যায়। প্রাণ বাঁচাতে তিন জনই ঝাঁপ মারেন। প্রসেনজিৎ সাহা নামে এক কর্মী স্পিডবোটের দড়ি ধরে উপরে উঠে আসতে পারলেও মহম্মদ সাহাদাদ কুরেশি এবং জয়ন্ত মজুমদারের খোঁজ মেলেনি। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ডুবুরি নামিয়ে তাঁদের খোঁজ চলে। মঙ্গলবার সকালে চন্দননগরের ইটভাটার চড়া থেকে সাহাদাদের দেহ উদ্ধার হয়। এ দিন বিকেলেই উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে গঙ্গার চড়া থেকে উদ্ধার হয় জয়ন্তবাবুর দেহ।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাহাদাদ এবং জয়ন্ত দু’জনেই সুনামের সঙ্গে কাজ করতেন। শুধু হুগলি নয়, হাওড়া, বর্ধমান, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা থেকেও তাঁদের ডাক আসত। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বহু মানুষকে বাঁচিয়েছেন তাঁরা। শুধু গঙ্গা কিংবা পুকুরে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নয়, পাতকুয়োয় কেউ পড়ে গেলেও তাঁদের ডাক পড়ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই অন্নপূর্ণা ঘাটে ভাসানের সময়ে তলিয়ে যেতে বসা দু’জনকে উদ্ধার করেছিলেন তাঁরা। জয়ন্তের বাড়ি হুগলির কৃষ্ণপুরে এবং সাহাদাদের বাড়ি চুঁচুড়ার খাগড়াজোলে। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে দু’জায়গাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। সাহাদাদের মা কানিজ ফতেমার আক্ষেপ, ‘‘ছেলে কষ্টের মধ্যে জীবন কাটিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই কেউ বিপদে পড়লে ছুটে যেত। যাঁদের বাঁচিয়েছে তাঁদের অনেকে যোগাযোগ রাখে।’’ জয়ন্তবাবুর মা কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে মানুষের সেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে গেল।’’