প্রচারে একসঙ্গে। ইনামুর (হলুদ পাঞ্জাবি) ও সাইদুর রহমান।
‘বড়দা’ ‘ছোড়দা’-র এখন এক সুর!
এই সে দিন পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতে ‘ছোড়দা’ সকালে রাজনীতির কাজকর্ম করলে, ‘বড়দা’ করতেন বিকেলে। রাজনীতির আঙিনায় কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি। এক জনের কাছে কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থী এলে, অন্য জন কৌতূহল দেখাতেন না। দু’জনে পরস্পরের মধ্যে রাজনীতির কথাবার্তাও এড়িয়ে চলতেন।
আর এখন ভাইয়ের সমর্থনে ভোটের প্রচারে নেমে দাদা বলছেন, ‘‘২৫ বছর ধরে আমাকে দেখছেন। এ বারে জোড়াফুল চিহ্নে আমার ভাই দাঁড়িয়েছে। ওকেই ভোট দেবেন। তবে আমার কাছ থেকেও আগের মতোই পরিষেবা পাবেন।’’ ভাই বলছেন, ‘‘রামের পাদুকা নিয়ে ভরত রাজ্য শাসন করেছিলেন। আমার পক্ষেও দাদার সহায়তা ছাড়া ভোটে লড়াই করা সম্ভব নয়।’’
দাদা— সাইদুর রহমান। সে দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন উলুবেড়িয়া পুরসভার কংগ্রেসের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তিন বারের কংগ্রেস কাউন্সিলর। এখন তৃণমূলে। ভাই— ইনামুর রহমান বরাবারই তৃণমূলে। এ বার ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী। ভাইকে জেতানোর জন্য ওয়ার্ডে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন দাদা। ‘ছোড়দা’ ‘বড়দা’র প্রচারে ওই ওয়ার্ড এখন সরগরম।
বিগত পুরবোর্ডেও কংগ্রেসের কাউন্সিলর ছিলেন সাইদুর। ২০০৯ সালের উলুবেড়িয়া পুরভোটে বামফ্রন্টকে হারিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট। কিন্তু চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিয়ে দু’দলের বিবাদ বাধে। দু’দলই ওই পদে আলাদা করে প্রার্থী দেয়। তৃণমূলের ক্রস-ভোটিংয়ের জেরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাইদুর। তবে, মাত্র এক বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। তারপরে কাউন্সিলর ভাঙিয়ে কংগ্রেসের হাত থেকে বোর্ড ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। পরবর্তীতে ১১ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের অধিকাংশ তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু পুরসভার মেয়াদ শেষ হওয়া ইস্তক সাইদুর ছিলেন কংগ্রেসেই। এ বারে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর সাইদুর চলে যান তৃণমূলে। ইনামুর অবশ্য প্রথম থেকেই তৃণমূলে।
এখন দুই ভাই হাত ধরাধরি করে পুরভোটের প্রচারে হাতিয়ার করেছেন উন্নয়নের রাজনীতিকেই। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডটিকে উলুবেড়িয়ার উন্নয়নের ‘নয়া মুখ’ বলা যায়। অদূরে বীরশিবপুরে রয়েছে শিল্পতালুক। রয়েছে একাধিক কারিগরি কলেজ। দমকল স্টেশন। উলুবেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুলের কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। দলবদলের আগে পর্যন্ত যে সাইদুর তৃণমূল শাসিত এই রাজ্যে উন্নয়ন দেখতেই পেতেন না, তিনি এখন বলছেন, ‘‘মমতার রাজত্বেই উন্নয়ন সম্ভব।’’ একই সঙ্গে পুরনো দলের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে এখানে কংগ্রেসের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’ অন্য দিকে, যে কংগ্রেসকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতেন না ইনামুর, তিনি এখন এক সময়ে কংগ্রেসি দাদার অধীনে থাকা ওয়ার্ডটিতে ‘ধারাবাহিক উন্নতি’ দেখতে পাচ্ছেন। অবশ্য ইনামুরের দাবি, ‘‘এটা ব্যক্তি সাইদুরের কৃতিত্ব। এর পিছনে কংগ্রেসের কোনও হাত নেই।’’
সাম্প্রতিক সময়ে বারবার দেখা গিয়েছে, হেভিওয়েট কেউ দলবদল করলে তাঁকে নতুন দলে সম্মানজনক পুনর্বাসন দেওয়া হয়। তা হলে সাইদুরের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? তিনি তো তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারতেন!
‘‘দল আমাকে প্রার্থী হতে বলেছিল। কিন্তু ভাই প্রথম থেকেই তৃণমূলে। ওর লড়াইকেও তো সম্মান জানাতে হবে! তাই প্রার্থী হলাম না।’’— বলছেন সাইদুর। দুই নেতাই তো এখন একই দলে। তা হলে সকালে ‘ছোড়দা’, বিকেলে ‘বড়দা’র অফিসের কী হবে ? সাইদুরের উত্তর, ‘‘‘আমি তো অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। এখন আমি শুধু বিকেলের নয়, ২৪ ঘণ্টার বড়দা। এটা মানুষের কাছে একটা বোনাস।’’
বিরোধীরা দুই ভাইয়ের এক হওয়াকে পাত্তা দিতে রাজি নয়। গত লোকসভা নির্বাচনে এখানে এগিয়েছিল বিজেপি। তাদের দাবি, তারাই ভোটে জিতবে। কংগ্রেসের বক্তব্য, নেতা চলে গেলেও ভোটব্যাঙ্ক অটুট থাকে। সেটাই ভোটের ফলে প্রমাণিত হবে। আশাবাদী বামপন্থীরাও।
কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে তা অবশ্য জানা যাবে ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই।