বিতর্কিত জমিতে বন্ধ হোটেল তৈরির কাজ।—নিজস্ব চিত্র
হোটেল তৈরির জন্য পুরসভার লিজ দেওয়া জায়গাকে ঘিরে বিতর্ক বাধল আরামবাগে। পূর্ত দফতরের অভিযোগ, তাদের জায়গা বেআইনি ভাবে লিজ দিয়েছে আরামবাগ পুরসভা। পুরসভা অবশ্য জমিটি খাস বলে দাবি করেছে।
আরামবাগের পল্লিশ্রীতে দ্বারকেশ্বর নদীর পাশে হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় হোটেল নির্মাণের জন্য কালিপুরের এক ব্যবসায়ীকে একটি জায়গা লিজ দেওয়া হয়। হোটেল নির্মাণ শুরুও করেন তিনি। কিন্তু দিন পনেরো আগে বিষয়টি নজরে আসে পূর্ত দফতরের। তাদের জায়গা পুরসভার লিজ দেওয়া নিয়ে অভিযোগ তুলে নির্মাণ বন্ধের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আপাতত কাজটি বন্ধ আছে।
মহকুমা পূর্ত দফতরের(নির্মাণ) সহকারি ইঞ্জিনিয়ার নিরঞ্জন ভড়ের অভিযোগ, “অনুমতি ছাড়াই অন্যায়ভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে পূর্ত দফতরের জায়গা। তা নিয়ে আপত্তি তুলে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা জানানো হয়েছে।’’ আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “সবটাই পূর্ত দফতরের জায়গা নয়। কিছুটা খাস জমি আছে। সেটা মেপে দেখতে হবে। প্রয়োজনে রাজ্য স্তর থেকে বৈধ অনুমতি নেওয়া হবে।’’
পূর্ত দফতর এবং পুরসভার এই টানাপোড়েনে বেকায়দায় পড়েছেন লিজ নেওয়া ব্যবসায়ী শেখ জিয়ার মহম্মদ। জিয়ার বলেন, “পুরসভার দেওয়া কাগজপত্রে জায়গাটা খাস হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার ভিত্তিতেই ১০০ ফুট বাই ১০০ ফুট জায়গার জন্য ১০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা সেলামি ও মাসিক ১৮৩০ টাকা ভাড়ার চুক্তি হয়। হোটেল নির্মাণ করার কথা হয় নিজের টাকায়। সেই মত সেলামির টাকা জমা দিয়ে হোটেল নির্মাণে ইতিমধ্যে ১৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছি। এখন ছাদ ঢালাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। দুই দফতরের কাজিয়ায় আমি সর্বস্বান্ত। কে ভুল কে ঠিক জানিনা।’’ পুরো বিষয়টা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানান তিনি।
বিতর্ক শুধু ওই জমি ঘিরেই নয়। এলাকায় পূর্ত দফতরের একাধিক জায়গা দখলের অভিযোগ উঠছে পুরসভার বিরুদ্ধে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ পুর এলাকার মধ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে সুধানীল পর্যন্ত তিন কিলেমিটার রাস্তায় পূর্ত দফতরের জায়গা ৬০ মিটার থেকে ৮০ মিটার চওড়া। কিন্তু সেই সব জায়গার অধিকাংশই অন্যায়ভাবে দখল হচ্ছে বলে অভিযোগ। হকারদের পুনর্বাসনের দাবি মেটাতে শহরের মধ্যে মূল রাস্তার ধারে কালিপুর এবং পল্লিশ্রী সংলগ্ন দুটি জায়গা দখল করে বছর খানেক আগেই মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। পূর্ত দফতর সেই কাজে আপত্তি তুলে নির্মাণ বন্ধ করতে বলে। তবে তারপরেও
নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। যদিও হকারদের এখনও সেখানে বসানো হয়নি। ওই দুটি মার্কেট ছাড়াও গৌরহাটি হকার্স কর্ণার, মিনি মার্কেটও পূর্ত দফতরের জায়গা দখল করে হয়েছে বলে অভিযোগ।
পূর্ত দফতরের জায়গা কেন জবরদখল? চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “রাস্তা সম্প্রসারণ করতে পূর্ত দফতর যেসব হকারদের উচ্ছেদ করেছে, তাঁদেরই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি আমরা। হকারদের পেটের ভাত মারা যাবে না। তাছাড়া শহরটা সুন্দর করতেও আমরা দায়বদ্ধ।’’ নিরঞ্জন বাবুর দাবি, “এভাবে দখলের ফলে কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অনেকগুলি জেলার যোগাযোগের অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ভবিয্যতে সম্প্রসারণের সম্ভবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনই যানজট এবং দুর্ঘটনার যা বহর, সচেতন না হলে সুন্দর হওয়ার বদলে বড় বিপদের মুখে পড়বে শহর।’’