কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট কমাতে গাড়ির একাংশকে আন্দুল রোেড ঘোরানোর পরামর্শ দিয়েছিল পূর্ত দফতর। ২০০৪ সালে মৌড়িগ্রামে রেলওয়ে উড়ালপুল উদ্বোধনের সময়। এখন যানজটের ফাঁসে আটকাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে। অথচ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে বেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি মুম্বই রোডে গিয়ে পড়া আন্দুল রোড তুলনায় ফাঁকাই রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা গাড়ির একাংশকে ওই রাস্তায় ঘোরানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না— সেই অভিযোগে ক্ষুব্ধ কোনা এক্সপ্রেসওয়ের নিত্য ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশ।
পূর্ত দফতর (সড়ক বিভাগ) সূত্রের খবর, দ্বিতীয় হুগলি সেতু চালু হওয়ার পরে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করে কেএমডিএ। মুম্বই রোডের কাছে নিবড়া থেকে বেরিয়ে বকখালি পর্যন্ত গিয়েছে এই ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। নিবড়া থেকে সাঁতরাগাছি হয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত রাস্তার অংশটি কেএমডিএ তৈরি করে। পক্ষান্তরে, আন্দুল রোড বহু পুরনো। আলমপুরের কাছে মুম্বই রোড থেকে বেরিয়ে মৌড়িগ্রাম -শিবপুর হয়ে রাস্তাটি চলে গিয়েছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হওয়ার আগে হাওড়া থেকে আলমপুর পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করত আন্দুল রোড দিয়েই। মৌড়িগ্রামে লেভেলক্রসিংয়ের জন্য এই রাস্তায় বেশ যানজট হত। রেল এবং রাজ্যের উদ্যোগে উড়ালপুল তৈরি হওয়ার পর থেকে মৌড়িগ্রামে যানজট হয় না। ফলে, আন্দুল রোড সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্ত হয়েছে।
গোড়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার গাড়ি চলত। সেই সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে দৈনিক গড়ে প্রায় এক লক্ষে। ২০০০ সালের মাঝামাঝি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে-সহ ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ককে বকখালি পর্যন্ত চার লেনে পরিণত করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে নেয় জাতীয় সড়ক সংস্থা (এনএইচএআই)। কিন্তু কলকাতার দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু লাগোয়া এলাকায় জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এই রাস্তা চার লেনে পরিণত করার পরিকল্পনা বাতিল করে তারা। পরে এনএইচএআই এই রাস্তা ফের রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দেয়। রাস্তাটি চার লেনের করা গেলে যানজট অনেকটাই কমে যেত।
রাস্তা চওড়া হচ্ছে না, অথচ, বেড়ে চলেছে গাড়ির সংখ্যা। এই অবস্থায় গাড়ির ভিড়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হাঁসফাঁস করছে। রাস্তাটি নিয়মিত ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা, ‘‘কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছেই রয়েছে নবান্ন। সেখানে অহরহ মন্ত্রীদের যাতায়াতের ফলে গাড়ি চলাচল সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। তখন বেড়ে যায় যানজট। তা ছাড়াও, সাঁতরাগাছি রেলওয়ে উড়ালসেতুতে ওঠা-নামার অংশ বেশ চওড়া। অথচ, সেতুর বাকিটা তুলনায় সংকীর্ণ। ফলে, সেখানে নিত্য যানজট হয়।’’ তার উপরে সাঁতরাগাছিতে চালু হচ্ছে বাস স্ট্যান্ড। এর পরে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজট আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা রয়েছে নিত্যযাত্রীদের।
এই সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দুল রোডকে কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন পূর্ত দফতরেরই শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মত হল, আন্দুল রোডকে পরিকল্পনামাফিক ভাবে কাজে লাগানো গেলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজট কমানো যেত। তা ছাড়া, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে আন্দুল রোড ধরলে এক্সপ্রেসওয়ের চেয়ে অন্তত ন’কিলোমিটার কম গিয়ে আলমপুরে পৌঁছনো যায়। গাড়ির জ্বালানিও সাশ্রয় হয়। তাঁদের বক্তব্য: সব সময় না হলেও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে যানজট হলে সাময়িক ভাবে কিছু গাড়িকে আন্দুল রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়াই যায়।
তবে বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। জেলা পুলিশের দাবি, আন্দুল রোড বিভিন্ন জায়গায় বেশ সরু হয়ে গিয়েছে। ফুটপাথ জবরদখল হয়ে গিয়েছে। যানজট হয়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাড়তি গাড়ি এই রাস্তায় চলাচল করলে পরিস্থিতি জটিল হবে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজয় রাণাডে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ির আংশিক আন্দুল রোড দিয়ে পাঠানোর পরিকল্পনা এক বার করা হয়েছিল। তবে এই সব সমস্যার জন্য তা বাস্তবায়িত করা যায়নি।’’ পরিস্থিতি অস্বীকার করছেন না পূর্ত দফতরের কর্তারা। তবে তাঁরা বলছেন, রাস্তাকে জবরদখলমুক্ত করা, চওড়া করার পরিকল্পনা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে সুবিধে বাড়বে বই, কমবে না।
তেমন কোনও আশু পরিকল্পনা আদৌ আছে কি? রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের মুখ্য বাস্তুকার মলয় ঘোষ বলেন, ‘‘আন্দুল রোড নিয়ে তেমন কোনও পরিকল্পনার কথা আমার অন্তত জানা নেই।’’ রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও পূর্ত (সড়ক) দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’