হাসপাতালে বোমায় জখম তৃণমূল কর্মী। — নিজস্ব চিত্র।
আরামবাগ মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে ভোটারদের। এই নিয়ে তাঁরা তাঁদের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন। সে সব যে নেহাত অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া হেল ভোটের তিন দিন আগেই।
আগামী শনিবার, ৩০ এপ্রিল রাজ্যে পঞ্চম দফায় ভোট হুগলিতে। তার আগে, মঙ্গরবার ভোরে পুরশুড়ার দেওয়ানপাড়া তথা মালপাড়ায় বোমা বাঁধতে গিয়ে তা ফেটে শেখ কাদের নামে এক তৃণমূল কর্মীর জখম হওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়াল। বছর আটত্রিশের আইসক্রিম বিক্রেতা শেখ কাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কী ভাবে বোমা এল, তা নিয়ে এলাকার লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিরোধীরাও যথারীতি এই নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, জেলায় শাসক দলের লোকজনদের বেআইনি অস্ত্রের মজুত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা পুলিশকে জানিয়ে আসচেন। কিন্তু পুলিশ সে সবে কান দেয়নি। কান দিলে এখন ভোটারদের আতঙ্কে থাকতে হতো না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শেখ কাদেরের আদি বাড়ি পুরশুড়ার সমসপুর গ্রামে। বছর চারেক ধরে সে দেওয়ানপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকে। বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ কাদের বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল কর্মী। ভোটের দিন হামলার আশঙ্কা করে মশলা যোগাড় করে ১০টা বোমা বানানোর চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটে গেল।”
যদিও পুলিশের দাবি, কী ভাবে তার কাছে বোমা এল, কী ভাবে ফাটল তা নিয়ে জেরায় নানা রকম কথা বলছে কাদের। কখনও বলছে, ‘বোমার মালমশলা এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময় তা ফেটে গিয়েছে’। আবার কখনও বলছে, ‘বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে বোমা ফেটেছে’। তবে ঘটনাস্থলে কোনও বিস্ফোরণের চিহ্ন দেখা যায়নি বলে পুলিশের দাবি।
স্ত্রী আসমিরা বেগম বলেন, ‘‘“স্বামীর অনেক শত্রু আছে। রাতে ও বাইরে শৌচকর্ম করতে বের হলে তারা গায়ে কিছু ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।” তবে এই ঘটনায় নিজেদের হাত ঝেড়ে ফেলেছে তৃণমূল। কাদের নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে জানালেও দলের পুরশুড়া ব্লক সভাপতি জয়দেব জানার দাবি, “ওই নামে আমাদের কোনও কর্মীর কথা জানা নেই। খবর নিয়ে জেনেছি আহতের বাড়ি সমসপুরে। সে দীর্ঘদিন বাড়িতে ছিল না।”
পুরশুড়ায় সিপিএমের জোনাল নেত্রী অর্চনা মন্ডলের অভিযোগ, “প্রতিটি সর্বদলীয় বৈঠকে আমরা বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করেছি। কিন্তু পুলিশ অভিযান চালায়নি। বিষয়টা মঙ্গলবারই নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দেওয়ানপাড়ার ঘটনাই প্রমাণ করল তৃণমূল অস্ত্র মজুত করছে।”