একটি রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে শ্যামপুর-১ ব্লকের বাণেশ্বরপুর-১ পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে তাঁকে বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া এবং কটূক্তির অভিযোগ তুললেন সিপিএমের মহিলা প্রধান। এর জেরে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে অনিয়মিত ভাবে পঞ্চায়েতে যাতায়াত করছেন প্রধান সোমা কপাট। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। অভিযুক্ত দীপককুমার কপাট নামে ওই তৃণমূল সদস্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সোমাদেবীর অভিযোগ, ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ ছাড়াই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি রাস্তা তৈরির কাজ করাচ্ছেন দীপকবাবু। এর প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে হেনস্থা করা হয়। এই অভিযোগ ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও, অতিরিক্ত জেলাশাসক-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের জানিয়েছেন তিনি। দীপকবাবুর বিরুদ্ধে সোমাদেবীকে কটূক্তি এবং হুমকির অভিযোগ তুলেছেন পঞ্চায়েতের আরও কয়েক জন সিপিএম সদস্যও।
যে রাস্তাটি নিয়ে গোলমাল, অভিযোগ পাওয়ার পরেই তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিডিও মৃণালকান্তি বাগচীও বলেন, “আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী ২৬ মার্চ উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের রঞ্জিত বেরা বলেন, “ওই পঞ্চায়েতে সমস্যা একটা হয়েছিল জানি। তবে, হেনস্থা বা গালিগালাজের বিষয়টি জানি না। খতিয়ে দেখছি।”
ওই পঞ্চায়েতে মোট আসন ১২টি। সিপিএমের দখলে রয়েছে ৬টি। তৃণমূলের দখলেও সমসংখ্যক আসন। টসে জিতে প্রধান হন সোমাদেবী। উপ-প্রধান তৃণমূলের। কিন্তু বোর্ড গঠনের পর থেকেই নানা বিষয়ে দু’পক্ষের আকচা-আকচি লেগেইরয়েছে।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুখাকুটি থেকে বিনোদ চক পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কিলোমিটার রাস্তাটিতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় পিচের করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ওই রাস্তার ইট তুলে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সংসদের রাস্তায় পাতা হবে। এর জন্য ‘সাপ্লিমেন্টারি অ্যাকশন প্ল্যান’ করে সেটি ব্লক প্রশাসনের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সম্প্রতি সেই অনুমোদন মিললেও ওয়ার্ক-অর্ডার, মাস্টার রোল, সুপারভাইজার নিয়োগ-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
এই অবস্থাতেই সপ্তাহ দুয়েক আগে দীপকবাবু ওই রাস্তার ইট তুলে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বাগানীপাড়া এলাকায় পাতার কাজ করাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। প্রধান বলেন, “প্রতিবাদ করাতেই আমাকে কটূক্তি করা হয়। বাড়িতে গিয়ে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে সব সময়ে লোকজন নিয়ে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে। প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যেতে পারছি না।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দীপকবাবু। তাঁর দাবি, “মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” তবে, ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ ছাড়াই কী ভাবে রাস্তার কাজ হচ্ছে, সে প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন।