হামলা: উদয়নারায়ণপুরে ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র
এ বার হরিপালের এক তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হল। ভাঙচুর চালানো হল ওই বাড়িতে। আরামবাগে আক্রান্ত হলেন রাজ্যের শাসকদলের আরও তিন নেতাকর্মী। রাজনৈতিক অশান্তির আঁচ ছড়াল গ্রামীণ হাওড়াতেও।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে হুগলিতে বিজেপি-তৃণমূলের আকাচাআকচি উত্তরোত্তর বাড়ছে। রোজই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিলছে হিংসার খবর। রবিবার হরিপালের পশ্চিম গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের নোয়াপাড়া থেকে ভাড়ামালপুর পর্যন্ত বিজয়- মিছিল করে বিজেপি। সেই মিছিল থেকে নোয়াপাড়ার বাসিন্দা, তৃণমূলের হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যার বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। ওই তৃণমূল নেত্রী তখন বাড়িতেই ছিলেন। ১০-১২ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারে বলে অভিযোগ। এলাকার লোকজন ওই তৃণমূল নেত্রীকে উদ্ধার করে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান।
ওই নেত্রীর স্বামী থানায় স্ত্রীকে মারধর, শ্লীলতাহানি এবং বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ চার জনকে আটক করে। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নেত্রী বলেন, ‘‘বিজেপির মিছিল থেকে আমার বাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। তারপর বিজেপির ছেলেরা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে। আমাকে মারধরও করেছে।’’ বিজেপি অভিযোগ মানেনি। দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ও সিপিএমের লোকজন ওই কাজ করছে। মুখে জয় শ্রীরাম আর হাতে বিজেপির পতাকা থাকলেই সকলে বিজেপির সদস্য নয়।’’
আরামবাগের রাগপুর গ্রামেও রাজকুমার বৈরী নামে এ দিন এক তৃণমূল নেতা আক্রান্ত হন। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত বিজেপি। রাজকুমারবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন দীপঙ্কর বৈরী ও মানিক বৈরী নামে আরও দুই তৃণমূল কর্মী। রাজকুমারবাবুর বিরুদ্ধে গ্রামে খবরদারি চালানো এবং ভোটের দিন বুথ এজেন্ট হয়ে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলে বিজেপি। তাঁকে গ্রামের বারোয়ারি পুজো মণ্ডপে ডেকে এনে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। বিজেপি নেতা বিমানবাবু এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীরাই মারধর করেছেন।’’
এ দিন খানাকুলের ছত্রশাল থেকে বালিপুর পর্যন্ত বিজয়-মিছিল করে বিজেপি। বালিপুরের কাছে সেই মিছিল লক্ষ করে তৃণমূল বোমা ছোড়ে বলে পাল্টা অভিযোগ তোলে বিজেপি। পুলিশ অবশ্য বোমাবাজির কথা স্বীকার করেনি। অভিযোগ মানেনি তৃণমূলও। তারকেশ্বরের নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েত ভবন থেকে আবার জাতীয় পতাকা খুলে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের দলীয় পতাকা টাঙানোর অভিযোগ ওঠে।
দুপুরে তারকেশ্বরের আস্থারা এলাকা থেকে মালপাহাড়পুর পর্যন্ত বিজয়-মিছিল করে বিজেপি। তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের অভিযোগ, ‘‘ওই মিছিল থেকে এসে কয়েকজন নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতে লাগানো জাতীয় পতাকা খুলে মাটিতে ফেলে দেয়।
সেই জায়গায় বিজেপির পতাকা লাগানো হয়। ওরা ভেবেছিল ওটা তৃণমূলের পতাকা।’’ তৃণমূলের জেলা আহ্বায়ক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।’’ দলের কেউ ওই কাজ করেনি বলে বিমানবাবুর দাবি। এলাকায় শান্তি ফেরাতে তৃণমূলও এ দিন তারকেশ্বরে মোটরবাইক র্যালি করে। দিলীপবাবু ছাড়াও ছিলেন পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান এবং অন্য নেতারা।
হুগলিতে অশান্তি হলেও এতদিন গ্রামীণ হাওড়া শান্ত ছিল। কিন্তু এ দিন উদয়নারায়ণপুরের সিংটি এলাকায় জোকা কুমিরমোড়া গ্রামে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার অভিযোগ, ‘‘বিজেপি বিজয়-মিছিল করেছিল। ফেরার সময় ওদের মদ্যপ কয়েকজন হামলা চালায়।
শহিদ বেদিতে থাকা দলের পতাকা খুলে ওরা বিজেপির দলীয় পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে।’’ জেলা (গ্রামীণ ) বিজেপি সভাপতি অনুপম মল্লিকের দাবি, ‘‘আসলে কে আগে বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। ওদেরই এক গোষ্ঠী ভাঙচুর করে বিজেপির পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে।’’