যাত্রীদের নামিয়ে বাস দখল, মারধরের নালিশ

আজ, কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। কিন্তু তার জন্য কলকাতা ঘেঁষা হাওড়া ও হুগলি জেলায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেল সোমবার থেকেই। কেননা, শাসকদলের নেতাকর্মীরা সভায় যাওয়ার জন্য এ দিন থেকেই বহু বাস তুলে নিয়েছেন। দুর্ভোগ, অসুবিধা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে বাসযাত্রীদের মারধর, হেনস্থার অভিযোগও উঠেছে হুগলির আরামবাগে। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০১:২০
Share:

ভরসা ছোট গাড়ি।

আজ, কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। কিন্তু তার জন্য কলকাতা ঘেঁষা হাওড়া ও হুগলি জেলায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেল সোমবার থেকেই। কেননা, শাসকদলের নেতাকর্মীরা সভায় যাওয়ার জন্য এ দিন থেকেই বহু বাস তুলে নিয়েছেন। দুর্ভোগ, অসুবিধা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে বাসযাত্রীদের মারধর, হেনস্থার অভিযোগও উঠেছে হুগলির আরামবাগে। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

বস্তুত, এ দিন হুগলির চারটি মহকুমার সর্বত্রই অসুবিধায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। ২০১৬ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। দলের গোষ্ঠী কোন্দল, মারধর, সংঘর্ষ ঠেকাতে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব এখন জেরবার। এই আবহে দলের ঐক্য যে আটুট, তা দেখাতে ভিড়কেই দলনেত্রী হাতিয়ার করতে চাইছেন বলে মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের কেউ কেউ। তাঁরা জানান, দলীয় সভায় লোক জমাতে রীতিমতো প্রতিটি জেলা ধরে গত বারের ২১ জুলাইয়ের সভার থেকে বেশি লোক নিয়ে যেতে কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

দলের এই ‘হু‌ইপেই’ চাপে পড়়ে গিয়েছেন নব নির্বাচিত প্রতিটি ব্লক, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। যার জেরে চুঁচুড়া, চন্দননগর, তারকেশ্বর, শ্রীরামপুর— সর্বত্রই এ দিন দুপুরের পর থেকে রাস্তা সুনসান। বেসরকারি গাড়ি, ম্যাটাডর চড়া ভাড়া হেঁকেছেন যাত্রীদের থেকে। গতবার হুগলির নেতাদের কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৭০ থেকে ৭৫ হাজার লোক নিয়ে যাওয়ার কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ বার তা বাড়িয়ে এক লক্ষের বেশি করা হয়েছে বলে জেলা তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতেই চাপে পড়ে গিয়েছেন নেতারা।

Advertisement


যাত্রীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীর বচসা।

বিষয়টি অস্বীকার করেননি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। বাস তুলে নেওয়ার কথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্ন ভাবে ছেলেরা কিছু জায়গায় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সেটা ঘটনা। তারকেশ্বর থেকে এমন খবর পেয়েছি। তবে, মানুষের অসুবিধার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’

সোমবার দুপুর ১২টা থেকেই আরামাবাগের রাস্তা সুনসান। বাস-মালিকদের অভিযোগ, জোর করে বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়েছিল রবিবার বিকেল থেকেই। গাড়ি তুলে নেওয়া নিয়ে বচসার জেরে কয়েকজন বাসকর্মীকে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে মারধর-সহ নানা ভাবে হেনস্থাও করা হয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকেও সোমবার মাঝপথ থেকে গাড়ি পাঠিয়ে আনা হল। মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘পরিষেবা একেবারে ভেঙে পড়েছে বলে কোনও অভিযোগ পাইনি। মানুষ বিকল্প যান ব্যবহার করছেন।’’

এ দিকে, বাস বন্ধের জেরে মহকুমা জুড়ে ব্যাপক ভোগান্তি হয় সাধারণ যাত্রীদের। অনেক বেশি খরচ করে গাড়ি-ট্রেকার ইত্যাদি ভাড়া করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হয় তাঁদের। বর্ধমান-আরামবাগ, আরামবাগ-তারকেশ্বর, কিংবা তারকেশ্বর থেকে মেদিনীপুর-খড়গপুর বা হলদিয়া রুটে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে বাস দখলের ঘটনা ঘটে। আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, ‘‘যাত্রীদের অসুবিধা করে বাস তুলে নেওয়া হচ্ছে এটা বাস্তব। আমাদের ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তবে, আগামী বছর যাতে এই অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে আমরা সচেতন থাকব।’’

বিভিন্ন বাস-মালিক সংগঠনের পক্ষেও যথেচ্ছ বাস তুলে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। হুগলির দূরপাল্লা বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক গৌতম ধোলে বলেন, ‘‘আরামবাগ-তারকেশ্বর রুটে মোট ১২০টি দূরপাল্লার বাস চলে। তার মধ্যে কোনও মতে মাত্র ১০টি গাড়ি যাতে চালিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানো যায়, সেই চেষ্টা করছি।’’ হাওড়া জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় হাজারের বেশি বাস আজ, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মতলার সমাবেশে যাবে। প্রায় প্রতিটি অঞ্চল কমিটি গড়ে দশটি বাস, ছোট গাড়ি বা ট্রেকার ভাড়া করেছে।

আরামবাগে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement