বিধানসভা নির্বাচনে জোট প্রার্থীর বুথ এজেন্ট হওয়ার ‘অপরাধে’ ভোটের দিনই তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একই কারণে ফের গত বৃহস্পতিবার সকালে পাটখেতে তুলে নিয়ে গিয়ে লাঠি-রড এবং ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে রবিবার কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হল ইব্রাহিম খান (৫৫) নামে খানাকুলের মাঝপুরের ওই সিপিএম কর্মীর।
ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর এ দিন গ্রামে পৌঁছতেই উত্তেজনা এবং সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। সিপিএমের অভিযোগ, ভোটে জেতার পরেও বিরোধীদের উপরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। ইব্রাহিমের বড় ছেলে রফিক খানের অভিযোগ, “বাবাকে বাঁশ ও রড দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ছাড়াও ধারাল অস্ত্র দিয়ে শরীরের কয়েক জায়গায় কোপ মারাও হয়েছিল।” সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শুধু নিজের দলের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই সরব। তৃণমূল পাল্টায়নি। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের তালিকা বানিয়ে পরিকল্পনামাফিক হামলা হচ্ছে আগামী পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে।’’
পক্ষান্তরে, পুরশুড়ার তৃণমূল বিধায়ক মহম্মদ নুরুজ্জামান অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তারা যে দলেরই হোক, পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের কর্মী-সমর্থকদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য চুড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।” মাঝপুর গ্রাম খানাকুল থানার অধীন হলেও পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে। পুলিশ জানায়, মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ডায়েরি হয়েছে। ওই ব্যক্তির মৃত্যুতে তাঁর পরিবার মামলা দায়ের করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাঝপুর উত্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩৬ নম্বর বুথে জোট প্রার্থীর এজেন্ট হয়েছিলেন ইব্রাহিম। বাড়ি ভাঙচুরের পর থেকে ঘরছাড়া ছিলেন। গত ২৫ জুন ফেরেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে নিজের জমিতে চাষের কাজ করছিলেন। তখনই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথম খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতাল এবং পরে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। আজ, সোমবার ময়না-তদন্তের পরে দেহটি গ্রামে নিয়ে আসার কথা।