কখনও ছুটতে হচ্ছে বেতন তুলতে। আবার কখনও বা মিড ডে মিলের খরচের টাকা তুলতে। তবে একদিন গিয়েই কাজ হচ্ছে না। ছুটতে হচ্ছে বার বার। আর তাতেই পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়।
এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। তার উপর ক্লাস ফেলেই ছুটতে হচ্ছে ব্যাঙ্কে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। নোট-কান্ডের জেরে এমনই অভিযোগ উঠেছে হাওড়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে। কোনও কোনও সময় ব্যাঙ্কে লাইন দিতে গিয়ে স্কুলেই অনুপস্থিত থাকতে হচ্ছে।
বাগনান-১ ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলির মিড ডে মিলের অ্যাকাউন্ট আছে একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে। লাইনে প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁদের। তাতেও যে প্রয়োজন মিটছে তা নয়। বৃহস্পতিবার লাইনে দেখা গেল খানপুর জুনিয়র বেসিক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেখ জাহাঙ্গির আলমকে। তিনি বললেন, ‘‘এর আগে তিনদিন এসেছি। কিন্তু ভিড় দেখে লাইনে দাঁড়াইনি। ফিরে গিয়েছি।’’ গত মাসের মিড ডে মিলের খরচের ১১ হাজার টাকা জমা পড়েছে তাঁর স্কুলের অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা তুলে তিনি মুদিখানা এবং রাঁধুনির বেতন মেটাবেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টাতেই তাই ব্যাঙ্কে হাজির হয়ে যান। টাকা যখন পেলেন বেলা ১টা। জাহাঙ্গিরের কথায়, ‘‘টাকা না তুললে মিড ডে মিল চালানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ রাধুঁনিদের টাকা দিতে হবে। মুদিখানার দোকানদারও রোজ তাগাদা দিচ্ছেন।’’ স্কুলের চার জন শিক্ষক। প্রথম তিনদিন ব্যাঙ্কে আসার জন্য আগে স্কুল ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সকাল এলেও টাকা তুলতে কেটে গিয়েছে সারা দিন। ফলে আর এদিন আর তিনি স্কুলে যাননি।
জাহাঙ্গির জানান, তাঁর তাড়াতাড়ি চলে আসা বা স্কুলে যেতে না পারায় সমস্যা তো হয়েইছে। অন্য শিক্ষকদেরও বেতন তোলার জন্য ছাড়তে হয়েছে। ফলে পঠন-পাঠনে কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। জেলায় কমবেশি সাড়ে তিন হাজার প্রাথমিক স্কুল আছে। এই ছবি প্রায় সর্বত্রই। জেলা স্কুল পরিদরর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি বলেন, ‘‘মিড ডে মিল বা বেতনের টাকা তোলার জন্য পঠন-পাঠনের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা কেউ আমাকে জানাননি।’’ তবে একইসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে কোনও কোনও স্কুলে এমনটা ঘটে থাকতে পারে।’’