হিমঘরে আলু দেখছেন মন্ত্রী। মঙ্গলবার তাপস ঘোষের তোলা।
রাজ্যের হিমঘরগুলিতে প্রচুর পরিমাণে আলু মজুত রয়েছে। অথচ বেলাগাম আলুর দাম। প্রতি বারেই বর্ষা থেকে পুজোর মরসুম পর্যন্ত এই রাজ্যের বাজারে আলুর দাম চড়া থাকে। এই রেওয়াজই এ বার ভাঙতে চাইছেন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত। মঙ্গলবার হুগলির বেশ কয়েকটি হিমঘরে হানা দেন তিনি। মন্ত্রীর সাফ কথা, ‘‘পরিস্থিতি দেখে গেলাম। ৩ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু ধরে হিমঘরে। এত দিনে কোথাও ৮০ হাজার, কোথাও বা ১ লক্ষ টন আলু বেরিয়েছে। মাঝখান থেকে ফড়েরা লাভ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না।’’
সরকারি হিসেব বলছে, এ রাজ্যের মানুষের জন্য সারা বছরে ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু লাগে। গত মরসুমে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু হয়েছে। এখনও ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের হিমঘরগুলি ফাঁকা করে দেওয়ার কথা। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, বর্ষা এবং পুজোর মরসুমে আলুর চড়া দাম পেতে হিমঘর থেকে প্রয়োজন মাফিক আলু বের করা হচ্ছে না। তার ফলে জোগান এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হচ্ছে না। তার জেরে খোলা বাজারে আলুর দাম হু হু করে বাড়ছে। শুধুমাত্র হুগলিতেই হিমঘরের সংখ্যা ১০৮টি। রাজ্যে এই সংখ্যা ৫৩৯টি। হিমঘর মালিকদের সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকার সঠিক পদক্ষেপই নিয়েছে। এটা বাস্তব, রাজ্যের হিমঘর মালিকদের একাংশ আলু চেপে দিয়ে ফড়েদের সঙ্গে যোগসাজসে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে।’’
রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও যে পরিমাণ আলু আছে, তার অনেকটাই হিমঘর মালিক, ব্যবসায়ী এবং ফড়েদের বলে কৃষি বিপণন দফতরের দাবি। দু’পয়সা বেশি পেতে ব্যবসায়ীরা আলু মজুত রেখে কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে বলে অভিযোগ শুনলেন মন্ত্রী। হুগলির ভাস্তারায় একটি হিমঘরের কর্মী চাঁদমনি হেমব্রম, ডাকমনি মাণ্ডিরা বললেন, ‘‘প্রতিদিন হিমঘর থেকে আলু সে ভাবে বের করা হচ্ছে না। এক বস্তা আলু বেছে আমরা ৭ টাকা পাই। এক এক সময় আমরা দিনে ৫০০ টাকার পর্যন্ত কাজ করি। হিমঘরে আমরা ৮৪ জন মহিলা আলু বাছাইয়ের কাজ করি। কিন্তু আলু বেরোচ্ছে কোথায়?’’
শুধু ওই হিমঘর নয়, ধনেখালির ভাণ্ডারহাটির একটি হিমঘরের কর্মী গৌর দাসের মুখেও একই কথা শোনা গেল। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আলুর বস্তা আছে। অথচ মালিক নেই। আসল মালিককে আড়াল করতে রাম, রহিম যার খুশি নামে আলু রাখা হচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছি, আলু যাঁরা রাখছেন তাঁদের ভোটার বা আধার কার্ডের প্রতিলিপি হিমঘরে রাখতে হবে। তাতে মজুত আলুর হিসেব যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি সঠিক মালিকের হদিসও সহজে মিলবে।’’