এ ভাবেই বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে জলা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ফের জলা-জমি ভরাটের অভিযোগ উঠছে বালিতে। বালির ঠাকুরানিচক মাঝেরপাড়ায় পূর্ত দফতরের ওই জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে সকলের চোখের সামনে। তবে ঘটনার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন জেলা পূর্ত দফতরের কর্তারাই।
কয়েক বছর আগে জলা ভরাটের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বালিতে খুন হন তপন দত্ত। সেই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। মামলা কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আবারও সেই বালিতে জলাভূমি ভরাট হচ্ছে দেখে স্থানীয় একটি ক্লাব এবং এলাকাবাসী প্রতিবাদে নেমেছেন। বিষয়টি পুলিশ, প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন জলাভূমি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে, যে জমি-মাফিয়ারা জলা ভরাট করছে, প্রতিবাদীরা তাদের হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
বার বার জানানোর পরেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতিবাদীরা। অথচ, প্রশাসনও এই মুহূর্তে কোনও অভয় দিচ্ছে না। জমি যাদের, সেই পূর্ত দফতরের (সড়ক) এক কর্তার দাবি, ‘‘বালি মৌজার ওই জলাজমি ভরাটের ব্যাপারে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে দেখা হবে।’’
হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) অংশুমান অধিকারী বলেন, ‘‘জলাভূমি বোজানো আটকাতে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আমার কাছে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেননি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জলা ভরাট হচ্ছে কি না, অন্য দফতরেরও তা দেখার কথা।’’ হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (উত্তর) সৌমিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এমন কিছু জানি না। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েক দশক আগে বালি, রাজচন্দ্রপুর, দুর্গাপুর, নিশ্চিন্দা, অভয়নগর এলাকায় রাস্তা তৈরির জন্য নিজেদের জমি থেকে মাটি তুলেছিল পূর্ত দফতর। সেই সব খোঁড়া অংশই জলাভূমিতে পরিণত হয়। সড়কপথে বালি ব্রিজ হয়ে ডানকুনি যেতে নিবেদিতা সেতু লাগোয়া জায়গায় রয়েছে ওই বিঘার পরে বিঘা জলাভূমি। তার মধ্যে পূর্ত দফতরের (পিডব্লিউডি দাগ নম্বর-১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৮৫, ১৩৮৬, ১৩৮৭, ১৩৮৮) প্রায় ১৯ বিঘা জমি বোজানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই মাঝেরপাড়ায় জমি-মাফিয়ারা জলা বোজাচ্ছে। এলাকার কিছু মত্সজীবী ওই সব জলায় মাছ চাষ করতেন। মাটি-আবর্জনা দিয়ে জলা ভরাটের ফলে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁদের রুটিরুজিও বিপন্ন। স্থানীয় বালক সঙ্ঘের সদস্যেরা ওই জলা ভরাটের প্রতিবাদে মাস ছ’য়েক আগে রাস্তায় নামেন।
ক্লাব সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘‘আমরা জমির দাগ নম্বর ধরে ধরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানিয়েছি। ওদের নথিতে তো সব আছে। তা হলে অবাধে জলা বোজানো হচ্ছে কী করে? প্রশাসনের কি কিছুই করার নেই?’’ তাঁদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, ‘‘তপন দত্ত খুনে যে সব দুষ্কৃতীরা জড়িত ছিল, তারা এখানেও সক্রিয়। তাদের উপরে রাজনৈতিক ছায়া রয়েছে বলেই হয়তো প্রশাসন-পুলিশ ব্যাপারটা দেখেও দেখছে না!’’
বালি-জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা এলাকার তৃণমূল নেতা অশোক রায় অবশ্য দাবি করেছেন জমি-মাফিয়াদের সঙ্গে শাসক দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘‘জলা ভরাটের এই অভিযোগ আমাদেরও অজানা। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।’’