নবান্ন। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েতে দুর্নীতি রুখতে আরও কঠোর হচ্ছে রাজ্য সরকার। শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলেও নজরদারি এবং তদারকি।
কিছুদিন আগেই এ রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ট্রেজারির সরাসরি সংযোগ (স্কিমেটিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ঘটানোর নির্দেশ জারি হয়েছিল। যাতে অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা পঞ্চায়েতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন প্রকল্পে কত টাকা এসেছে, কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কত টাকা পড়ে আছে তা অনলাইনে জানতে পারেন। এ বার পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল খাতের যাবতীয় আয়ও তাদের ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করার নির্দেশিকা জারি করেছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। পঞ্চায়েতকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খুলতে হবে।
গত ২৯ জুলাই ওই নির্দেশিকা রাজ্যের সব জেলাশাসককে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রলয় মজুমদার বলেন, “পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল মজবুত করতে আয়ের উৎসগুলো থেকে যথাযথ কর আদায় এবং ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় তদারকি করতেই এই অনলাইন নথিভুক্তির ব্যবস্থা। এতে নিজস্ব তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতাও থাকবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়মমতো পঞ্চায়েতের সংগৃহীত নিজস্ব তহবিলের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অর্থ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খরচ করতে হয়। কিন্তু হুগলির অধিকাংশ পঞ্চায়েতেরই নিজস্ব তহবিল মজবুত নয়। এলাকার একটি পানীয় জলের কল মেরামত করতেও সরকারি তহবিলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এই পরিস্থিতিতে আবার দুর্নীতির অভিযোগও ভুরিভুরি। যেমন, গত বছর সেপ্টেম্বরে আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল নয়ছয় করে তৃণমূলের আগের বোর্ডের সাত সদস্যের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনা হয় বলে ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই দলেরই নতুন বোর্ডের প্রধান আব্দুল আজিজ খান। পরে অবশ্য ব্লক প্রশাসনের আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা পেয়ে সেই ফোন ফেরত দিতে হয় সদস্যদের।
গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতে আবার ইজারা দেওয়া কিছু পুকুর এবং ছ’টি গুচ্ছ মিনি থেকে আয়ের টাকা বছরের পর বছর তহবিলে জমা পড়ছে না বলে প্রধান মুনমুন রায় ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ রকমই অধিকাংশ পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল নয়ছয় করার অভিযোগ প্রচুর। অনেক পঞ্চায়েত আধিকারিকের অভিযোগ, নতুন গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের যে বড় আয় হয়, তার সবটাই প্রায় স্থানীয় নেতার আত্মসাৎ করেন। পঞ্চায়েতে খবর না-দিয়ে নিজেরাই টাকা নিয়ে গৃহ নির্মাণের অনুমতি দেন।
পঞ্চায়েতগুলিকে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী করতে বহুদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব তহবিল সৃষ্টির ক্ষেত্রও অনেক। যেমন, ভূমি ও গৃহকর আদায়, পুকুর ইজারা দেওয়া, টোল ও লেভি আদায়, খুচরো ও পাইকারি ব্যবসার নিবন্ধীকরণ ফি, যানবাহন নিবন্ধীকরণ ফি, মোটরচালিত গভীর-অগভীর এবং ছোট নলকূপের ব্যক্তিগত উদ্যোগের নিবন্ধীকরণ ফি, পঞ্চায়েত এলাকর সব রাস্তা-ফেরি-সেতুর টোল আদায় ইত্যাদি। কেউ যদি কর না দেন, তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ‘বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি’ আইন অনুযায়ী মামলাও করতে পারে।