অগস্ট মাস শেষ হতে চলল। এখনও গত মাসের বেতনই হাতে পেলেন না রাজ্যের শিশু শিক্ষাকেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের (এমএসকে) প্রায় ৪৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা। এর মধ্যে কেটে গিয়েছে ইদ। প্রায় খালি হাতেই উৎসব কাটিয়েছেন সংখ্যালঘু শিক্ষকেরা।
রাজ্যে প্রায় দু’হাজার এমএসকে (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) এবং ১৬ হাজার এসএসকে (চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত) রয়েছে। সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ। স্কুলগুলি চলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনে।
তবে শিক্ষকদের বেতনের টাকা দেয় সর্বশিক্ষা দফতর। কিন্তু সেই বেতন নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ। অনেক সময়ে মাসের মাঝামাঝি গিয়ে বেতন মেলে বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষকেরা। গত বছর নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের বেতন যথাযথ সময়ে পাননি শিক্ষকেরা। পরে অবশ্য তা একসঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষকেরা জানান, বেতনের জন্য তাঁদের প্রায়ই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে তদ্বির করতে হয়। একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন তাঁরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। কিন্তু কেন? শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এর পিছনে রয়েছে শিক্ষা দফতর এবং পঞ্চায়েত দফতরের চাপান-উতোর।
পঞ্চায়েত দফতরের অভিযোগ, সর্বশিক্ষা দফতর ওই বেতনের টাকা রাজ্য শিক্ষা দফতরে পাঠালেও শিক্ষা দফতর তা সময়ে দেয় না। ফলে, শিক্ষকদের বেতন সময়মতো দেওয়া যায় না। শিক্ষা দফতরের পাল্টা অভিযোগ, পঞ্চায়েত দফতর সময়মতো ‘ইউসি’ (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দেয় না। তাই সময়ে বেতনের টাকা পাঠানো যায় না।
জুলাই মাসের বকেয়া বেতন প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘আমরা নিজেরাই ওই শিক্ষকদের বেতনের টাকার সংস্থান করেছি। শীঘ্রই তা শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরে শিক্ষা দফতর টাকা পাঠালে সেই ঘাটতি পূরণ করে নেওয়া হবে।’’
শুধু নিয়মিত বেতন নিয়েই নয়, ওই শিক্ষকদের একটা বড় অংশের অসন্তোষ রয়েছে ডিএলএড ডিগ্রির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও। কারণ, তাঁদের ওই ডিগ্রি নেই। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ, ২০২০ সালের মধ্যে সব শিক্ষককে ওই ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
সর্বশিক্ষা প্রকল্পের অধীনে যে সব পার্শ্বশিক্ষকের ওই ডিগ্রি নেই, তাঁদের জন্য শিক্ষা দফতর নিখরচায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এমএসকে-এসএসকে শিক্ষকদের জন্য তা করা হয়নি বলে অভিযোগ। অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সংস্থায় মাথাপিছু সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পঞ্চায়েত দফতর সেই টাকা ফিরিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিলেও এখনও তা মেলেনি বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা অবশ্য শীঘ্রই ওই টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন।