শ্রীরামপুরের পর এ বার বৈদ্যবাটী। এখানেও রেস্তরাঁয় অভিযান চালিয়ে মিলল ফ্রিজে জমিয়ে রাখা মাংস, রান্না করা বাসি খাবার। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে একটি রেস্তরাঁ ‘সিল’-ও করে দিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। অন্য একটি রেস্তরাঁর ফ্রিজার ‘সিল’ করা হল। বিজ্ঞপ্তিও সেঁটে দেওয়া হয় রেস্তরাঁ দু’টির বাইরে।
ভাগাড় কাণ্ড নিয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শোরগোল পড়েছে। হুগলিরই ভদ্রেশ্বর পুরসভার ভাগাড় থেকে মাংস কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই জেলার বিভিন্ন পুরসভার তরফে হোটেল-রেস্তরাঁয় হানা দিয়ে খাবার, বিশেষত মাংস সংরক্ষণের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে অভিযান শুরু হয়।
শুক্রবার সকালে বৈদ্যবাটী পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁয় হানা দেওয়া হয়। পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন, উপ-পুরপ্রধান ব্রহ্মদাস বিশ্বাস, স্যানিটারি ইনস্পেক্টর কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু-সহ বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর দলে ছিলেন। কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকেরও দুই কাউন্সিলরও ছিলেন। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, শেওড়াফুলি স্টেশনের কাছে জিটি রোডের ধারে একটি রেস্তরাঁর ফ্রিজে বাসি পকোড়া, ফিসফ্রাই মেলে। সেগুলি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। পাশের একটি রেস্তরাঁয় ঢুকে দেখা যায়, ফ্রিজারে বাসি বিরিয়ানি। কয়েক দিনের পুরনো মাংস এবং মাছ। রান্নাঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই রান্না করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। রেস্তরাঁটি সিল করে দেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘যেমন তেমনভাবে খাবার এবং মাংস সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছিল। সেই কারণেই রেস্তরাঁটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ওই খাবার এবং মাংস পরীক্ষা করানো হবে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
বৈদ্যবাটী রেলগেটের কাছে একটি নামজাদা রেস্তরাঁতেও হানা দেন পুর-কর্তৃপক্ষ। সেখানেও ফ্রিজারে জমিয়ে রাখা মাংস পাওয়া যায়। দু’টি ফ্রিজার ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। পুরপ্রধান জানান, দু’টি রেস্তরাঁরই জমানো মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে।
খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
যে হোটেলটি সিল করা হয়েছে, সেটির মালিক সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘‘বাসি খাবারের ব্যবসা করি না। হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে আমি রেস্তরাঁ খুলেছি। কোন মাংস কত দিন সংরক্ষণ করা যায়, তা জানি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘সব নথি আমার কাছে আছে। পুর-কর্তৃপক্ষকে তা দেখাব।’’ বাসি খাবার থাকলে দোকানের কর্মচারীরা তা খান বলে সঞ্জীববাবুর দাবি।
পুর-নাগরিকদের অনেকেই বলছেন, হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে অভিযান হয়েছে। পুর-এলাকায় দিল্লি রোডের ধারে নামজাদা হোটেলে কেন অভিযান হল না, সেই প্রশ্নও ওঠে। জেলা প্রশাসনের তরফেও সর্বত্র হোটেল-রেস্তরাঁয় নিয়মিত হানা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন অভিযান তাঁরা নিয়মিত চালাবেন।
এ দিন চন্দননগর পুরসভার পক্ষ থেকেও শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁয় অভিযান চালানো হয়। পুরপ্রধান রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা সংগৃহীত খাবারের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাব। তবে শহরের কিছু হোটেলের ব্যবস্থা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। আমরা সর্তক করেছি তাঁদের।’’ আজ, শনিবার লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার-সহ বেশ কিছু জায়গায় পুরসভার অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।