আলোড়ন: হরিপালের ভারামল্লপুরের পুকুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে
যেন কড়াইতে টগবগিয়ে তেল ফুটছে! হরিপালের পশ্চিম গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের ভারামল্লপুর গ্রামের হাজরাপাড়ার একটি পুকুর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ২০-২৫ দিন ধরে। পুকুরের একাংশে জলে বুদবুদ উঠে চলেছে। তার জেরে গুজব ছড়াচ্ছে। পুকুর সংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দাদের আবার আশঙ্কা, এর ফলে ধস নামতে পারে! বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। এর পিছনে যে অলৌকিক কোনও কারণ নেই, এলাকাবাসীকে তা বোঝাচ্ছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এলাকা রীতিমতো সরগরম।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অগস্ট মাসের শেষ দিকে তাঁরা লক্ষ্য করেন, পুকুরের একপ্রান্তে ছোট একটি অংশের জলে বুদবুদ উঠছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ভিড় জমতে থাকে। দিন দশেক আগে পুকুরের আরও একটি জায়গায় বুদবুদ উঠতে শুরু করে। তার চারপাশে ছোট ছোট আরও অনেক বুদবুদ উঠছে।
সন্টু রায় নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘বহু লোক আসছেন। কেউ বলছেন, সোনা রয়েছে, কারও মনে হচ্ছে, গ্যাস লিক করেছে। ভয় লাগছে, যে ভাবে অনবরত বুদবুদ উঠছে, ভবিষ্যতে ধস না নামে!’’খবর পেয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা সেখানে যান। নিরীক্ষণের পরে তাঁদের বক্তব্য, ঠিক কী কারণে এমন ঘটছে তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। তবে এর পিছনে যে অলৌকিক কারণ নেই, জলস্তর বা মাটি অথবা শিলাস্তরের তারতম্যের ফলেই যে এমন হচ্ছে, মানুষকে তা বোঝানো হচ্ছে। বিজ্ঞানমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত তথা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অরূপ ভূমিজ বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ঠাকুরের রব উঠেছিল। পরে বিষয়টি সবাইকে বোঝানোয় ভুল ভাঙে। তবে কী কারণে জল এমন আলোড়িত হচ্ছে, আমরাও জানতে উৎসুক।’’রহস্য ভেদের আর্জি জানিয়ে কলকাতায় ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছেন বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক তরুণকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন, বিষয়টি অস্বাভাবিক হলেও অলৌকিক নয়। কিন্তু, সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপিত না করলে মানুষের কুসংস্কারের সুযোগ নিয়ে এর অপব্যাখ্যা করা হতে পারে। তাই, আমরা চাই সংশ্লিষ্ট দফতর সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক ব্যাখ্যা দিক।’’
মঞ্চের সদস্যরা জানান, আলোড়িত অংশের জলে রং নেই, গন্ধও নেই। সেখানে আগুনও জ্বলছে না। ফলে, পাতা পচে মিথেনজাতীয় গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে, এমন সম্ভাবনাও নেই। ওই জলের উষ্ণতাও স্বাভাবিক। ক্রমাগত জল আলোড়িত হলেও জলের স্তর বাড়ছে না। তাঁদের ধারণা, পাইপ দিয়ে যে ভাবে জল ওঠে, সে ভাবেই উচ্চ চাপের কারণে মাটির তলা থেকে জল উঠে আসছে।ওই জলাশয়ের কিছুটা দূরে দিঘি রয়েছে। সেই দিঘির জল কোনও ভাবে মাটির নীচে দিয়ে এসে ওই ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, এই বিষয়টিও তাঁদের ভাবাচ্ছে। বিষয়টির ব্যাখ্যায় ‘আর্টেজিয় কূপ’-এর কথাও উঠে আসছে। তরুণবাবু বলেন, ‘‘আর্টেজিয় কূপের ক্ষেত্রে জলের স্তর ইংরেজির ‘ইউ’ অক্ষরের মতো হয়। তাতে নীচের অংশে কোনও ভাবে ছিদ্র হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। জল আলোড়িত যেমন হচ্ছে অর্থাৎ বেরিয়ে আসছে, চক্রাকারে তেমনই ভূগর্ভে জল প্রবেশ করছে বলে পুকুরের জলস্তর বাড়ছে না। পৃথিবীর নানা জায়গায় এমন ঘটনা দেখা যায়।’’পর্যবেক্ষণের পরে বিজ্ঞানকর্মীদের ধারণা, ধসের সম্ভাবনা নেই।