প্রতীকী ছবি।
ঢক্কানিনাদ আগেও কম হয়নি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। শ্রীরামপুর শহরে টোটো বেলাগামই। ভোটের আগে শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণে ফের ব্যবস্থা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হল।
পুরসভা ঠিক করেছে, শুধুমাত্র তাদের ছাড়পত্র পাওয়া টোটোই এই শহরে যাত্রী তোলা-নামানো বা স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে পারবে। অন্য জায়গার টোটো (রিষড়া, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটী, পিয়ারাপুর, রাজ্যধরপুর প্রভৃতি এলাকার) শ্রীরামপুরে চলে আসে। তারা এখানে যাত্রী তুলতে পারবে না। যাত্রী নামিয়েই ফিরে যেতে হবে। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন জায়গায় যানজট মোকাবিলায় ওই এলাকায় টোটোর ‘রুট’ নির্দিষ্ট করে দেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছে।
টোটো-সমস্যা সমাধানে বুধবার শ্রীরামপুর টাউন হলে বৈঠক হয়। সেখানে বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান উত্তম নাগ-সহ কয়েক জন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর এবং আধিকারিক ছিলেন। শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসন, মোটরযান দফতর, থানা, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। টোটো সংগঠন এবং মালিক বা চালকেরা এসেছিলেন।
পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘টোটোর সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে ব্যবস্থা না নিলে সামলানো মুশকিল। সাধারণ মানুষও আমাদের কাছে আর্জি জানাচ্ছিলেন। সেই কারণেই কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’’ তাঁর দাবি, টোটো নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছিলই। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ বৈঠক হয়। তার পরে করোনার জন্য পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। থেমে যাওয়া প্রক্রিয়াই আবার চালু হল।
এ শহরে টোটোর বাড়বাড়ন্ত রুখতে বছর দুয়েক আগে শনাক্তকরণ করা হয় পুরসভার তরফে। শহরের টোটোগুলিতে হলুদ রং করা হয়। নম্বরপ্লেট বসানো হয়। ২৯টি ওয়ার্ড মিলিয়ে এমন টোটোর সংখ্যা প্রায় ১২০০। এই টোটো-চালকদের পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়। কিন্তু ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। পুরসভার চিহ্নিত করার পরেও বহু টোটো এ শহরে রয়েছে। পুরসভার হিসেব বলছে, এই শহরে অন্তত আড়াই হাজার টোটো চলে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ বার তাদের চিহ্নিত করা টোটোর-চালকদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে। তবে, তাঁরাও যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে বা নামাতে পারবেন না। নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়াতে হবে। কেননা, টোটো যত্রতত্র দাঁড়ানোয় বহু ক্ষেত্রে অন্য গাড়ি বা পথচারীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
পুরসভার তরফে মোটরযান দফতরের আধিকারিকদের অনুরোধ করা হয়, এই মুহূর্তে শ্রীরামপুরে যেন টোটোজাতীয় গাড়ির ছাড়পত্র দেওয়া না হয়। কারণ, এমনিতেই প্রচুর গাড়ি বেড়েছে। স্টেশন সংলগ্ন জায়গায়, বিশেষত সকাল-সন্ধের ব্যস্ত সময়ে যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছে। এ জন্য অনেকেই লাগামহীন টোটো চলাচলকে দায়ী করছেন। এই সমস্যা সমাধানে ওই চত্বরে টোটোর ‘রুট ম্যাপ’ তৈরির চেষ্টা করা হবে বলে পুরকর্তারা জানান।
অত্যধিক টোটোর কারণে শুধু যানজটই বাড়েনি, বাস-অটোর রোজগারও তলানিতে ঠেকেছে। দিন কয়েক আগে অটো-চালকরা বিক্ষোভ দেখান।
পুরকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের শনাক্ত করা টোটোও যাতে অন্য শহরে গিয়ে যাত্রী না তোলে, সে ব্যাপারে চালকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। তাতে একই ভাবে ওই সব জায়গাতেও যানজটের সমস্যা কমবে। এই সব সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হল বা এর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সাত দিন পরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের রিপোর্ট নিয়ে ফের আলোচনা করা হবে।