কানে কানে: বুধবার পথশ্রী প্রকল্পের অনুষ্ঠানে সুবীর মুখোপাধ্যায় ও মনোজ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।
‘আমপান-দুর্নীতি’ সংক্রান্ত দু’টি পোস্টারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সরগরম হল হুগলির চণ্ডীতলা। শুরু হল রাজনৈতিক চাপান-উতোরও।
বিজেপির নামে ওই পোস্টার দু’টি সাঁটানো হয় গরলগাছা-সহ বিভিন্ন এলাকায়। একটিতে দেখা যাচ্ছে কোনও অনুষ্ঠানে গরলগাছা পঞ্চায়েতের প্রধান তথা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা মনোজ সিংহের সঙ্গে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের ছবি। নীচে লেখা— ‘গরিবের আমপানের টাকা ভাগাভাগি করলেন চণ্ডীতলার বড় নেতা’। তার নীচে বড় করে তিন বার ‘ছিঃ’। অন্য পোস্টারটিতে লেখা— ‘কী বিচিত্র এই তৃণমূল কংগ্রেস! আমপানের টাকা গরলগাছার প্রধান চুরি করল। চণ্ডীলার বড় নেতাকে ভাগ দিল’। পোস্টারে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধিক্কারও জানানো হয়েছে।
বিজেপি অবশ্য এই পোস্টারের দায় নিতে অস্বীকার করেছে। এর পিছনে শাসকদলের কোন্দল রয়েছে বলেই ইঙ্গিত করেছে তারা। দলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসুর দাবি, ‘‘আমরা পোস্টার মারতে যাব কেন? ও সব যাঁরা দাদা-দিদির অনুগামী, তাঁদেরই কাজ। আমরা প্রকাশ্য সভায় দিনেরবেলায় হাটে-বাজারে মিটিং করে অভিযোগ করেছি, আমপানের টাকা নিয়ে তৃণমূল দূর্নীতি করেছে।’’ পোস্টার সাঁটার পিছনে কারা রয়েছে, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূল নেতা সুবীরবাবু। এ দিন রাতে পোস্টারগুলি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। পাল্টা তৃণমূল পোস্টার মারে বলে এলাকাবাসীর দাবি।
বুধবার গরলগাছায় ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল সুবীরবাবু এবং গরলগাছার প্রধানকে। ছবিটি অবশ্য তার আগের একটি অনুষ্ঠানের বলে দাবি করেছেন অনেকে। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘মনোজবাবুকে দল বহিষ্কার করলেও তিনি প্রধান। পথশ্রী সরকারি প্রকল্প। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তা-সহ অন্যেরা উপস্থিত ছিলেন। সরকারি কাজে কর্মাধ্যক্ষ হিসেবেই হাজির ছিলাম। পোস্টার কারা মারল, দল তদন্ত করুক। পোস্টারে কল্যাণবাবুকেও কালিমালিপ্ত করা হয়েছে।’’
আমপান ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই মনোজবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। পোস্টার নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও গরলগাছার প্রধান। আমার এলাকায় সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে কোনও অন্যায় করেছি বলে মনে করি না।’’ কল্যাণবাবু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলেরা জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘ঘটনাটি জানি। চণ্ডীতলার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।’’
গরলগাছায় বুধবার সরকারি অনুষ্ঠান হলেও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বাতী খন্দকার এবং জেলা পরিষদের সদস্যা অনিন্দিতা মণ্ডল আমন্ত্রণ পাননি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তাঁরা উষ্মাও প্রকাশ করেন। তাই বৃহস্পতিবারের পোস্টারে কেউ কেউ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরছায়াও দেখছেন।